আঠাশ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ দিয়ে শুরু হওয়া এ সপ্তাহ রোববার হরতাল হয়ে আজ শেষ হচ্ছে তিন দিনের অবরোধে। দিন শেষে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসা বিচিত্র নয়। লাগাতার যদি না-ও হয়, একটু বিরতি দিয়ে হলেও হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সূত্রগুলো কঠোর কর্মসূচির আভাসই দিচ্ছে। বছরের শেষে এসে এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাবর্ষ এলোমেলো হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যদিও জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশের বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন নভেম্বর মাসেই শেষ করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছে
রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে এবং হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দফায় দফায় হতে থাকলে প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা, নতুন শিক্ষাক্রমের বার্ষিক মূল্যায়ন ও স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা যথাসময়ে আয়োজন কঠিন হবে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে নভেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলোতে নতুন পাঠ্যবই পাঠানোর প্রক্রিয়া। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বার্ষিক ও টার্ম পরীক্ষাও ঝুলে যেতে পারে। এরইমধ্যে অবরোধকালে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল-কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিলো নগণ্য। শিক্ষাপঞ্জি ঠিক রাখা নিয়ে তাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। আর অনিশ্চয়তা ভর করেছে প্রায় চার কোটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভাবনায়।
আন্দোলনের গতিপ্রকৃতিতে দেখা যাচ্ছে, প্রথমে হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই কর্মসূচি দিচ্ছে জামায়াত। আরো দুএকটি ছোট দল তাদের অনুসরণ করছে। আর তাদের ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। ফলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ হচ্ছে। এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে গত কয়েক দিনে লাশ পড়েছে কয়েকটি। রাজনৈতিক কর্মী ছাড়াও মৃত্যু হয়েছে পুলিশের। আগুন দেয়া হয়েছে বাসে, হাসপাতালে। অভিভাবকরা তাই সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অবরোধকালে রাজধানীর একাধিক স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে ফিরে গেছেন। কোথাও কোথাও ক্লাস হলেও শিক্ষার্থী ছিলো কম। অনেক কলেজে শিক্ষকদের উপস্থিতিও ছিলো হতাশাজনক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন পরিচালকের কণ্ঠেও তাই শিক্ষাপঞ্জি ঠিক রাখতে পারা না পারা নিয়ে শঙ্কা। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত
ঘোষিত সময়েই বার্ষিক পরীক্ষা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন নেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। তবে এরপর পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী হয়তো নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেম্বরে স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে না পারলে ডিসেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে না। আগামী বছর আরো তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটাও যথাসময়ে শুরু করা কঠিন হবে।
যদিও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশাবাদী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, স্কুলগুলোতে ৯ নভেম্ব থেকে বার্ষিক মূল্যায়ন শুরু হবে। তাই এখনই অন্য কোনো বিষয় ভাবার সময় আসেনি। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে।
জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ৫ নভেম্বর থেকে সরিয়ে ৯ নভেম্বর নেয়া হলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার সময় ৩০ নভেম্বরই রাখা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের দুই পরীক্ষার মধ্যে সময় কমে আসবে বলে আশাবাদী শিক্ষা প্রশাসন। গত সোমবার এ সংক্রান্ত সংশোধিত চিঠি স্কুলগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।