সুতীর্থ বড়াল, দৈনিক শিক্ষাডটকম: ‘জনাব, বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের যৌথ উদ্যোগে প্রচলিত প্রমোট (বিদ্যালয় উন্নয়ন-২য় প্রকল্প) আপনার বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য এককালীন কিছু আর্থিক সাহায্য করিতে ইচ্ছুক। ইসি আপনার বিদ্যালয় উন্নয়নে সর্বদা প্রস্তুত। চিঠি পাওয়া মাত্র মোবাইলে কথা বললে বাধিত হব। আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার একান্ত, এম. ফয়সাল আমিন চৌধুরী (যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক, (প্রমোট-২য় প্রকল্প) মোবাইল- ০১৮৭১৪৫৭৬৯’–হুবহু এই লেখা সম্বলিত চিঠিটি সম্প্রতি এসেছে বাগেরহাটের পরানপুর শহীদ শেখ আবু নাসের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে।
প্রধান শিক্ষক হন্তদন্ত হয়ে খোঁজ নিয়ে জানলেন চিঠিটি ভুয়া। তবে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বহুবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ভুয়া চিঠি দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্রের সদস্যরা।
সম্প্রতি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে আসে এই ভুয়া চিঠিটি। এর আগেও এমন অসংখ্য ভুয়া চিঠি আসে দৈনিক আমাদের বার্তার ইমেইলে। এবারে শুধু এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, এর আশপাশের আরো তিন থেকে চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন চিঠি এসেছে।
বাগেরহাটের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ২২ মার্চের স্বাক্ষর করা চিঠিটি তাদের প্রতিষ্ঠানে পৌঁছায় গত ২৯ মে। এই চিঠিটা দিয়ে ২০ লাখ টাকার অফার দিয়েছে এবং টাকা পাওয়ার আগে তারা ২০ হাজার টাকা আবদার করেছেন মিষ্টি খাওয়া বাবদ। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানী দল জানতে পারে, এর আগে দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের নাম ভাঙিয়ে ভুয়া চিঠি’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়। সেই খবরে যে চিঠির কথা উল্লেখ রয়েছে তাতে দেখা গেছে নাম রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এম আশরাফুল আলম চৌধুরীর। আর এবারের চিঠিতে নাম রয়েছে যুগ্নসচিব এম ফয়সাল আমিনের। এই দুটি চিঠি মিলিয়ে দেখলে পার্থক্য পাওয়া যায় শুধু নামে, তবে স্বাক্ষর একই দেখা যায়।
এর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও প্রকল্প পরিচালকের নাম ভাঙিয়ে একটি মাদরাসাকে উন্নয়নের জন্য ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং কিছু ল্যাপটপ দেয়ার কথা বলে চিঠি পাঠায় একটি প্রতারক চক্র। চিঠি পাওয়ার পর তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে মিষ্টি খাওয়ার জন্য তাদেরকে ২০ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলা হয়।
জানা গেছে, নওগাঁর সাপাহার উপজেলার হাপানিয়া কেএম ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ বরাবর ওই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যৌথ পার্টনারশিপে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প (বিদ্যালয় উন্নয়ন-২য় প্রকল্প) ‘প্রমোট’এর প্যাডে পরিচালক এম. আশরাফুল আলম চৌধুরীর স্বাক্ষরে বলা হয়, চিঠি পাওয়ামাত্র যোগাযোগ করলে বাধিত থাকবো।
মাদরাসাটির পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক মো. আতিকুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, পরে তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে মিষ্টি খাওয়ার জন্য তাদের অফিসের ফাইন্যান্সিয়াল হেড আব্দুল্লাহ আল মামুন-এর বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। তখন ৫শ টাকা পাঠিয়ে পরে বাকি টাকা পাঠানোর কথা বললে রেগে যায়। আবার বলে, এভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়।
এদিকে বাগেরহাটের পরানপুর শহীদ শেখ আবু নাসের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মানিক সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, চিঠিটি আসার পরে প্রধান শিক্ষক আমাকে দিলে আমি ওই নম্বরে ফোন দিই। পরে টাকা চাওয়া হলে আমি পরে কথা বলবো বলে ফোন রেখে দেই।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, টিঠিটি যাচাই করে আমরা বুঝতে পারি এটা ভুয়া। আইনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তবে ঊর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করা হবে।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার বিকল্প নেই। কোনো চিঠি এলে প্রথমে যাচাই-বাছাই করতে হবে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা বলেন, সরকার থেকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় সর্তকতা মূলক প্রচারণা চালানো হয়। সেগুলোকে অনুসরণ করতে হবে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।