শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি দখলে বেপরোয়া ছিলেন সাদিক আব্দুল্লাহ

আমাদের বার্তা, বরিশাল |

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালে নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নগ্ন হস্তক্ষেপ চালাতেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। একাধিক স্কুলের জমি দখলের চেষ্টা করে মায়ের নামে করতে চেয়েছিলেন পার্ক ও ভবন। ৫০ বছরের বোটানিক্যাল গার্ডেন ধ্বংস করে তার অনুসারীরা করতে চেয়েছিলো খেলার মাঠ। এমনকি পরিবারের সদস্যদের নামে কলেজের নামকরণ করার প্রচেষ্টায় ব্যবহার করেছিলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। তার নির্দেশ অমান্য করায় হেনস্তার শিকার হন একাধিক শিক্ষক। এমনকি অনেককে দেয়া হয়েছে পেট কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবার হুমকি। 

প্রায় ৫ শতাংশ আয়তনের একটি ডোবা নগরীর কালিবাড়ী রোডস্থ জগদীশ সারস্বত গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সম্পত্তি। বর্ষা মৌসুমে শিশু শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ সেখানে পড়ে আহত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাই এটিকে ভরাট করার উদ্যোগ নিলেও বাগড়া দিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। 

২০১৮-২৩ মেয়াদে মেয়র থাকাকালে এই পুকুরটি মায়ের নামে লিখে দিতে চাপ দেন তিনি। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এর বিরোধিতা করলে তাদের ওপর নেমে আসে নানারকম নির্যাতন। এমনকি সাদেকের ক্যাডার বাহিনীর কাছে লাঞ্ছিত হন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শাহ আলম।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক কাওছার হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ডোবাটিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন এই আশংকা থেকে বালু ফেলা হয়। এই সংবাদ পেয়ে সাদিক আব্দুল্লাহ লোক পাঠিয়ে প্রায় ৫০ ট্রাক বালু- মাটি ডোবাটি থেকে নিয়ে যান। পরে সেটি তার মায়ের নামে লিখে দিতে চাপ দেন। 

এই শিক্ষক আরো বলেন, বরিশালের শিক্ষক সমাজ মেয়র সাদিকের কাছে নিয়মিত হেনস্তা- লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। তার কাছে সবাই যেনো জিম্মি ছিলো। জমি লিখে না দেয়ায় তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে সাদিকের ক্যাডার বাহিনী নির্যাতন করেছে। 

মা ভক্ত সাদিক আব্দুল্লাহর চোখ পড়ে নগরীর আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছমত আলী খান ইনস্টিটিউটের বান্দ রোডের জমির ওপর। মায়ের নামে সেখানে ভবন করতে চেষ্টা চালান জমি দখলের। তার নির্দেশ অমান্য করায় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হেনস্তা করা হয় প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে। 

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষক এইচ এম জসীম উদ্দীন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, স্কুলের সম্পত্তি মেয়র সাদিক নিজের মায়ের নামে চান। প্রতিষ্ঠানের বান্দ রোডস্থ কিছু জায়গা তাকে না দেয়ায় তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। এমনকি আমাকে পেট কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবার হুমকি দেন। 

শুধু এই দুই প্রতিষ্ঠানই নয়। নগরীর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়র থাকাকালীন তার নগ্ন হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। মেয়র থাকাকালীন মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের স্মৃতি বিজড়িত সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে নিজ পরিবারের সদস্যদের নামে করতে চেয়েছিলেন তিনি। সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ৫ দশকের পুরনো বোটানিক্যাল গার্ডেন ধ্বংস করে তার অনুসারীরা করতে চেয়েছিলেন টেনিস কোর্ট। এসব অপচেষ্টা রুখে দেয় স্থানীয় সচেতন জনতা।  

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে নিজ পরিবারের এক সদস্যের নামে করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলো সাদিক আব্দুল্লাহ। সেসময় আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের বিরুদ্ধে তার ক্যাডার বাহিনীকে রাস্তায় নামিয়ে দেন তিনি। এছাড়া বিএম কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেন ধ্বংস করে টেনিস খেলার কোর্ট করতে চাইলে আমরা তা প্রতিহত করি। 

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই লাপাত্তা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। টানা একমাস বিভিন্ন মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে এমন শিক্ষক হয়রানি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সমাপ্তি দেখতে চান শিক্ষক সমাজ।

বরিশাল সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা যারা শিক্ষকতা পেশায় জড়িত তারা অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে না থাকলেও সমাজে সম্মান-শ্রদ্ধা পাই, তা নিয়েই তুষ্ট থাকি। কিন্তু এরকম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমাদেরকে যেভাবে অপমান-অপদস্ত করা হয় তা সত্যি বেদনাদায়ক। নতুন বাংলাদেশে এ থেকে শিক্ষক সমাজ পরিত্রাণ পাবে সেটাই কমানা করি।  

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031578540802002