বাজেটের কয়েকদিন আগেই আলোচনা শুরু হয়, কোন পেশার কর্মীদের জন্য কী বরাদ্দ থাকছে! একই জিজ্ঞাসা নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও। কিন্তু এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের জন্য কিছুই ছিল না। বেসরকারি (ইবতেদায়ি, প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, কারিগরি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হবে কিনা, এমপিওভুক্তি হবে কিনা, এমপিওভুক্তরা সব সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবেন কিনা কিংবা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসর ও কল্যাণ তহবিলের টাকা অল্প সময়ের মধ্যেই হাতে পাবেন কিনা- এসব প্রশ্নের কোনো উত্তরই ছিল না অর্থমন্ত্রীর দীর্ঘ বাজেট বকক্তৃায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো এবং মার্শালের মতে, শিক্ষা এমন একটি খাত, যার কাজ হলো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে পুঁজির সঞ্চালন ঘটানো। অর্থনীতিবিদ আর্থার শুলজ দেখিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করা সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষায় ১১ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বিষয়ে সাবেক শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে মিশ্র শিক্ষাব্যবস্থা (সশরীর ও অনলাইনে) চালুর কথা বলা হচ্ছে। তাতে সব শিক্ষার্থীর জন্য ডিজিটাল ডিভাইস দরকার। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি করা ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ল্যাপটপের দাম বাড়তে পারে। এটা আবার ভেবে দেখা উচিত। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে বরাদ্দ আরো বেশি হওয়া উচিত।
বাজেটে শিক্ষকদের প্রত্যাশার ঘোষণা নিয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘শিক্ষকরাই শিক্ষার পাইলট। ৯৭ শতাংশ শিক্ষক যে পরিমাণ বেতন-ভাতা পান, তা দিয়ে কী দ্রব্যমূল্যের এই সময়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়। শিক্ষকদের মধ্যে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য দূর করা উচিত।’
জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার বাড়ানোর দাবি নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোসহ দেশের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটছে না।
শিক্ষায় বরাদ্দ প্রসঙ্গে গতকাল এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষা বরাদ্দ শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য নয়। এর সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে। বাজেটে দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বেড়েছে। শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে। আমরা কতটা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারব, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’ এর আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ জিডিপির ছয় ভাগ হওয়া উচিত। আমরা এখন তিন ভাগে আছি।’