স্নাতক তথা সম্মান ডিগ্রিকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে টার্মিনাল ডিগ্রি ধরা হয়। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতককে টার্মিনাল ডিগ্রি বলা হয় না। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্নাতককে টার্মিনাল ডিগ্রি করার কথা সুপারিশ করেছে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে। ইউজিসি এমন নীতি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। কিন্তু এটা করেই সমাধান নয়। স্নাতককে টার্মিনাল ডিগ্রি করতে হলে সব প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরকে সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে যেন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নবম গ্রেডে চাকরির ক্ষেত্রে স্নাতক উল্লেখ করে দেয়। তাহলে সমাধান হতে পারে। কিন্তু পাবলিক সার্ভিস কমিশন তাদের নবম গ্রেডে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি উল্লেখ করে। তবে অনেক সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকের নবম গ্রেডের চাকরিতে আবেদনের জন্য স্নাতক ডিগ্রির সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জনা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনার্সকে শেষ ডিগ্রি হিসেবে বাস্তবায়ন করে গণহারে মাস্টার্স করার সুযোগ বন্ধ করতে চায়। এভাবে না করে মাস্টার্সে ভর্তি করার ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা করে দিতে পারে। এই নীতিমালা অনুষদভিত্তিক করতে পারে। যেমন ব্যবসায় প্রশাসন এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে যারা স্নাতকে (সম্মান) ৩.৫০ বা ৩.৫০-এর বেশি সিজিপিএ পাবে তারাই একমাত্র মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারবে। আবার কলা অনুষদের সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩.২৫ করে দিতে পারে। ফলে গণহারে মাস্টার্স করার সুযোগ কমে আসবে। অন্য একটি উপায় হতে পারে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আসতে হবে এবং আসন সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্টার্স ডিগ্রিসহ পিএইচডি ডিগ্রিধারী হতে হবে এই নিয়ম নতুনভাবে চালু হওয়া উচিত। আমাদের দেশে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি দিয়ে শিক্ষক হতে পারে। এটা হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রিধারী শিক্ষক কীভাবে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেবেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই স্নাতককে (সম্মান) টার্মিনাল ডিগ্রি হিসেবে মেনে নেওয়া ঠিক হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক স্বাধীনতা রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক একটি জেনারেল নীতিমালা থাকতে হবে, যা সব পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনুসরণ করবে। একটা বিভাগ কতজন শিক্ষার্থীকে মাস্টার্স করাতে পারবে সেটা নির্ভর করবে সে বিভাগে কতজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক এবং অধ্যাপক রয়েছেন, যারা ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের গাইড করতে পারবেন। মাস্টার্সে এবং পিএইচডিতে থিসিস বা গবেষণা প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। যার জন্য ভালোমানের সুপারভাইজার দরকার, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাস্টার্স ডিগ্রি গবেষণাভিত্তিক হওয়া উচিত। বিদেশে যারা মাস্টার্স করে তারা স্কলারশিপ বা ফেলোশিপ নিয়ে যান। তাহলে আমাদের দেশে গণহারে মাস্টার্স করার সুযোগ না দিয়ে সীমিত সংখ্যায় নামিয়ে আনতে হবে। যারা মাস্টার্স করতে পারবে তাদের স্কলারশিপ বা ফেলোশিপের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। গবেষণার ফলাফল যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগে।
যদি স্নাতক (সম্মান) টার্মিনাল ডিগ্রি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এর কোর্স কারিকুলাম নতুন করে তৈরি করতে হবে যা চাকরির বাজার এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে যেন খাপ খায়। এতে যেন কোনো প্রকার অবহেলা না হয়। সবকিছুর ঊর্ধ্বে হলো শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে অবশ্যই দক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিকল্প নেই। শিক্ষক নিয়োগে কোনো কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়।
গণহারে মাস্টার্স করা বন্ধ করতে পারলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে আবাসিক সংকট রয়েছে, তা আর থাকবে না। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমবে এবং আর্থিক সাশ্রয় হবে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যকর করতে হবে, যা দেশের মঙ্গলে আসবে। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত নিশ্চিত করুন।
লেখক : মো. শফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়