দেশের সার্বিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষাই একটি দেশের জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। প্রাচীন চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছিলেন, ‘যদি তোমার এক বছরের জন্য পরিকল্পনা থাকে, তবে ধান রোপণ করো। যদি তোমার দশ বছরের জন্য পরিকল্পনা থাকে, তবে গাছ রোপণ করো। যদি তোমার সারাজীবনের জন্য পরিকল্পনা থাকে, তবে মানুষকে শিক্ষিত করো।’ এই উক্তির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন এবং সমাজের অগ্রগতি অর্জনের জন্য শিক্ষার গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি।
শিক্ষা মানুষের চিন্তাধারা, জ্ঞান, এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে, যা তার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জনে সহায়ক হয়। শিক্ষিত মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারে, স্বাস্থ্য সচেতন হয়, সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন। যা একটি শিক্ষিত সমাজ উদ্ভাবন এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। এটি জনগণকে সুশাসন ও গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষিত সমাজই একটি দেশের প্রকৃত সম্পদ, এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
আমি এখানে এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে কথা বলছি- বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের তুলনায় অত্যন্ত নিম্নমানের। উন্নত দেশগুলো যেমন জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে শিক্ষকদের বেতন সবচেয়ে বেশি, এমনকি কিছু উন্নয়নশীল দেশেও শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। চীনে সরকারি স্কুল শিক্ষকদের জন্য বেতন সরকারি স্কেলে নির্ধারিত হয় এবং সেখানে বিভিন্ন অতিরিক্ত সুবিধাও রয়েছে। ভারতের শিক্ষকদের বেতন রাজ্যভেদে পরিবর্তিত হয়। তবে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা সাধারণত কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের বেতন স্কেলের আওতায় থাকেন, যা সরকারের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়। পাকিস্তানে শিক্ষকদের বেতন সরকারি স্কেল অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এখানে শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত স্কেলের আওতায় বিভিন্ন প্রকার সুবিধা ও ইনসেনটিভ রয়েছে। নেপালে শিক্ষকদের বেতন সরকারি স্কেল অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। শ্রীলঙ্কায় সরকারি শিক্ষকদের বেতন কাঠামো সরকারী নীতিমালা অনুসারে নির্ধারিত হয়। এখানে শিক্ষকদের জন্য একটি সুসংহত বেতন কাঠামো এবং বিভিন্ন প্রকার সুবিধা আছে যা সরকারি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মালয়শিয়ায়ও শিক্ষকদের বেতন সরকারি স্কেল অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সেখানে সরকারি শিক্ষকদের জন্য একটি মজবুত বেতন কাঠামো আছে যা তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও ইনসেনটিভ প্রদান করে।
কিন্তু আমাদের দেশে মাধ্যমিক শিক্ষার অনেকগুলো ধারা- সরকারি, বেসরকারি এমপিওভুক্ত ও মাদরাসা শিক্ষা ইত্যাদি। সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। শিক্ষকরা গ্রেড ভিত্তিক স্কেলে বেতন ভাতা পান। বেতন কাঠামো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন কম এবং সুযোগ সুবিধা ও বৈষম্যও প্রকট । বেশির ভাগ স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, সরঞ্জামাদি ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রচুর অভাব রয়েছে। এদেশে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি এবং তাদের পেশাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যথেষ্ট উদ্যোগ এবং নীতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন।
ভারতে উচ্চমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। চীনে শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণ সুবিধায় ব্যাপক উন্নত। এখানের শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও গবেষণার সুযোগ সুবিধা পায়। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে উচ্চমানের শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধা, উন্নত প্রযুক্তি, গবেষণার সুযোগ এবং আধুনিক অবকাঠামোও রয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা সরকারি ও বাধ্যতামূলক থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৭ ভাগ প্রতিষ্ঠান বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান। আমাদের এই জায়গাটায় প্রচুর কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও শিক্ষাব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
যখন সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের অভাবে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবক্ষয় হচ্ছিলো, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিরোধী দলীয় নেতারা সরকারকে স্বৈরশাসক বা ফ্যাসিবাদি সরকার হিসেবে আখ্যা দিচ্ছিলো, বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে যখন নেতিবাচক আলোচনা-সমালোচনায় হচ্ছিলো, ঠিক তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদি বা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। গঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নিয়ে নবীন প্রবীণের অন্তর্বর্তী সরকার। যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষিত সমাজ নেতৃত্বের আসনে। এখন মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এটি শিক্ষার মান উন্নয়ন করবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমতা আনবে। জাতীয়করণের মাধ্যমে একটি অভিন্ন শিক্ষাক্রম এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষকরা তাদের অধিকার ও সম্মানজনক অবস্থানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এই সংগ্রাম মূলত মাঠ পর্যায়ের শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োজিত শিক্ষকদের আর্থিক, সামাজিক, পেশাগত বৈষম্য ও অবস্থানকে কেন্দ্র করে। শিক্ষকদের শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে গণ্য করা হলেও, বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। তাদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘদিনের এবং তা শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষকদের অধিকার, মর্যাদা, এবং ন্যায্যতার দাবি আদায়ের জন্য চলমান রয়েছে।
এই ইতিহাস মূলত তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন, চাকরির নিরাপত্তা, ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে গড়ে উঠেছে। শিক্ষকদের এই সংগ্রাম বিভিন্ন সময় নানা রূপে প্রকাশিত হয়েছে যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা্র ওপর প্রভাব ফেলেছে।
আন্দোলনের প্রধান কারণ তাদের বেতন বৈষম্য। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা, বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে এই বৈষম্য প্রকট। যেখানে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা তুলনামূলক ভালো বেতন ও অন্যান্য অনেক সুবিধা পান, কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই সুবিধাগুলো প্রায় অনুপস্থিত বললেই চলে। এই বৈষম্য শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যা শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছে। সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ।
সরকারি শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত একটি বেতন কাঠামো রয়েছে, যা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং পদ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এটি জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি, ইনক্রিমেন্ট, পেনশন সুবিধা, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা, এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা তাদের আর্থিক উন্নতির সহায়ক ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
পক্ষান্তরে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য এসকল সুযোগ সুবিধা সাধারণত নেই বললেই চলে। যা তাদের আর্থিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় বেসরকারি শিক্ষকদের অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। বেসরকারি শিক্ষকরা অবসর গ্রহণের পর পেনশন সুবিধা পান না, যা তাদের অবসর জীবনের আর্থিক নিরাপত্তাকে অনিশ্চিত করে । এমনকি তাদের জমাকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ও অবসরকালীন ভাতা পেতে বছরের পর বছর পায়ের জুতা ক্ষয় করতে হয়। এতে অনেক শিক্ষক অবসরে এসে বেতন ভাতা হীন অবস্থায় পথে বসতে হয়। তাদের বরণ করতে হয় বার্ধ্যক্যজনিত এক করুণ জীবন।
সরকারি শিক্ষকদেরকে ঈদ, পূজা, এবং অন্যান্য উৎসবের সময় উৎসব ভাতা দেয়া হয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদেরকে সরকারি শিক্ষকদের সিকিভাগ উৎসব ভাতা দেয়া হয়, যা তাদেরকে উৎসবের সময় আর্থিক সংকটে ফেলে।
সরকারি শিক্ষকরা সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং প্রতিমাসে চিকিৎসা ভাতাও পান। বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য এই ধরনের সুবিধা অনুপস্থিত এবং চিকিৎসা ভাতা নামে মাত্র। তাদের অসুস্থতার সময় নিজের খরচে চিকিৎসা করতে হয়।
বেতন বৃদ্ধি ও ইনক্রিমেন্টের ক্ষেত্রে সরকারি শিক্ষকদের বেতন নির্দিষ্ট সময় অন্তর বৃদ্ধি পেলেও বেসরকারিদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা অনুপস্থিত থাকে। সরকারি চাকরির তুলনায় বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরির স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা কম। তাদের চাকরি কমিটি নির্ভর থাকায় যেকোনো সময় হারানোর শঙ্কা থাকে। সরকারি শিক্ষকরা দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ পান কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত, ফলে তারা পেশাগতভাবেও অনেক পিছিয়ে।
একই শিক্ষাগত যোগ্যতার শিক্ষক, একই দেশ, একই সিলেবাস পড়ানো হয়, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে সরকারি ও বেসরকারি একই রকম ফলাফল করে। অথচ সরকারি এবং বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেতন বৈষম্য আকাশ সমান।
সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ১৬ হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা, বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ, অবসর কল্যাণ কর্তন- নেই, উৎসব ভাতা মূল বেতনের ১০০ ভাগ, অবসরকালীন এককালীন ভাতা মূল বেতনের ৯০ এর এর ৩০০ গুণ, অবসরকালীন মাসিক ভাতা মূল বেতনের ৯০ শতাংশ + ১৫০০ টাকা, টাইমস্কেল ৩ টি।
অপর দিকে বেসরকারি এমপিওভূক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ১২ হাজার ৫০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, বাড়িভাড়া ১ হাজার টাকা, অবসর ও কল্যাণ কর্তন- ১০ শতাংশ, উৎসব ভাতা মূল বেতনের ২৫ ভাগ, অবসরকালীন এককালীন ভাতা মূল বেতনের ৭৫ গুণ, অবসরকালীন মাসিক ভাতা নাই, টাইমস্কেল ২ টি।
এছাড়াও সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুবিধাজনক জায়গায় বদলির সুযোগ আছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোনো বদলির সুযোগ নেই। সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ও সহকারী প্রধানশিক্ষকদের টাইমস্কেল আছে বেসরকারি শিক্ষকদের টাইমস্কেল নেই।
জাতীয়করণের সমীকরণঃ বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান জরিপ ২০২৩ এর মতে, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, প্রভাষক ও অধ্যক্ষসহ মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৪৪ জন এবং শিক্ষার্থী মোট ১ কোটি ২৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯৩৬ জন।
৪ লাখ ৩১ হাজার ২৪৪ জন এমপিওর মাধ্যমে প্রায় ৯ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার বেতন বোনাস পেয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীর কোনো আয় সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। কিন্তু মাসে শিক্ষার্থী প্রতি গড়ে ৩০ টাকা হারে ১২ মাসের ফিস আদায় করলে ৪৪৬ কোটি টাকা এবং ভর্তিফি ও সেশনফি-বাবদ বছরে একবার ৫০০ করে নিলে মোট ৬১৯ কোটি টাকা হবে। এতে মোট ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকা প্রায় আদায় করা সম্ভব হবে।
উক্ত পরিসংখ্যান হতে দেখা যায় যে, ৩১ হাজার ২৪৩ টি প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণ করলে সরকারের ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। এখানে এমপিওর মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্তি ও শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রাপ্তি ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা বাদ দিলে, সরকারের অতিরিক্ত লাগবে বছরে প্রায় ৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা।
যদি ১ হাজার কোটি টাকাও লাগে তাহলেও বলা যায় ‘জাতীয়করণ আর্থিক কোনো সম্যসা নয়, প্রয়োজন সদ্বিচ্ছার।’ জাতীয়করণের সফলতার জন্য সরকারের সদিচ্ছা, সঠিক পরিকল্পনা, এবং স্বচ্ছতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ ছাত্র-শিক্ষক, নবীন-প্রবীণের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেকেই পেশাগত জীবনে শিক্ষক ছিলেন, আপনারা শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষকদের মর্মবেদনা বোঝেন, আপনারাই পারেন জাতিকে এই সমস্যা হতে উদ্ধার করতে। আপনারাই পারেন মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করতে।
লেখক: শিক্ষক, জাফলং, সিলেট