শিক্ষার্থীদের অকালমৃত্যু ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ জরুরি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের অবস্থা আজ এমন অবস্থানে দাঁড়িয়েছে যে কিছুদিন পরপরই খবরের কাগজ উল্টালে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর মিলে। এ ব্যাপারটি এত বেশি ঘটেছে যে আত্মহত্যার খবরগুলো আমাদের নিকটও স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আত্মহত্যার খবরগুলো খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। আমরাও এতটা অভ্যস্ত হয়েছি যে সকালে কারো আত্মহত্যার খবর দেখলে বিকালে তা ভুলে যাই। আমরা ধরেই নিচ্ছি কিছু মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুকাল আগেও এই সম্পর্কিত ঘটনাগুলো ছিল বিরল। বুধবার (৮ নভেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বসবাস করছি। প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের জীবনযাপনে নানা পরিবর্তন এসেছে। এখনকার তরুণরা ভার্চুয়াল জগতেই বেশি সময় অতিবাহিত করছে। আমরা সবাই এখন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকারী, যার ফলে অনলাইন জগতের সঙ্গে আমাদের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। মানসিক সমস্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে ঘরকুনো হয়ে থাকা। তাছাড়াও আত্মহত্যার খবরগুলো আমরা এখন যেভাবে খুব সহজেই দেখতে পারছি কিছুকাল আগেও তা সম্ভব হতো না। যার ফলস্বরূপ মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। কারণ একটি পরিচিত বিষয়ের মুখোমুখি হতে আপনি অপেক্ষাকৃত কম জটিলতার সম্মুখীন হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থীকে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রেমে ব্যর্থতা, যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা, নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্ম নেয়া, চরম হতাশা ইত্যাদি বর্তমানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীর নিত্যদিনের সঙ্গী। বেশির ভাগ সময়ই এসব শিক্ষার্থী প্রয়োজনের সময় মানসিক সাহায্য পাচ্ছে না। মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের তুলনায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। একজন মানুষের শরীর ও মন দুটিরই সুস্থতা প্রয়োজন। কিন্তু শারীরিক সুস্থতাকে আমরা যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবি, মানসিক স্বাস্থ্যকে ততটাই অবহেলা করি। আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার পরিবেশটা এখনো অনুকূল হয়ে ওঠেনি। কেউ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে চাইলে আমরা হরহামেশাই তাদের পাগল বলে সম্বোধন করি। একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ নেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি ঘন ঘন আত্মহত্যার ঘটনাগুলো দেখেই আমাদের বুঝার কথা।

একটি জাতিকে রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তার জন্য সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। যে কোনো দেশে একসঙ্গে অনেক সচেতন মানুষের বসবাস যদি থেকে থাকে তাহলে ওই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবার প্রথমে অবস্থান করবে। আমাদের ক্ষেত্রেও একই নীতি। তাই আমাদের জাতিকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অভ্যস্ত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই কালের পরিক্রমায় আমাদের সমাজ থেকে মানসিক সমস্যা মানেই পাগল হয়ে যাওয়ার কুসংস্কার বিলুপ্ত করা সম্ভব। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানুষগুলো সমাজেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজকের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আগামীদিনে সমাজের প্রতিটি স্তরে নেতৃত্ব দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদিও আত্মহননের ঘটনা বেশি ঘটছে এর সমাধানও এখানেই আছে। যে কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজতে তার উৎপত্তিস্থল অত্যন্ত কার্যকরী।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এতগুলো ঘটনার পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না তা ভাবনার বিষয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই শারীরিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা আছে, একই চিকিৎসাকেন্দ্রে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে একটি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে, পাশাপাশি চরম হতাশার সময় নিজের আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবে। তাই ইউজিসিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আস্থা রাখছি অতিসত্বর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অকালমৃত্যু থেকে রক্ষা করবেন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069060325622559