শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংলগ্ন ওরাকল বিসিএস কোচিং সেন্টারের পরিচালক আরিফ আহমেদের বিরুদ্ধে। এক সপ্তাহ ধরে তাঁর কোনো খোঁজ মিলছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে ওরাকলের প্রধান শাখায় অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহকে লক্ষ্য করে চলতি বছরের মে মাস থেকে ওরাকলের ইবি শাখার কার্যক্রম শুরু হয়। কোচিং সেন্টারটির নিয়মানুযায়ী ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ অফার পদ্ধতি না থাকলেও ইবি শাখা অফারের ঘোষণা দেয়। এতে ষাটের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হন, অধিকাংশই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। অফার অনুযায়ী ৭ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হলে শুধু ক্লাসসংশ্লিষ্ট বুকলেটগুলো পাওয়া যাবে। অন্যদিকে ১০ হাজার ৩০০ টাকায় ভর্তি হলে বিষয়ভিত্তিক পাঁচটি বই ও বুকলেট দেওয়া হবে। ক্লাস শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ পর বুকলেট দেওয়া হলেও বিষয়ভিত্তিক বইগুলো হাতে পাননি শিক্ষার্থীরা। প্রকাশনা থেকে বইগুলো প্রকাশিত হলেই শিক্ষার্থীরা হাতে পাবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়।
এভাবে চার মাস অপেক্ষা করেও বই না পেয়ে শিক্ষার্থীরা করপোরেট শাখায় অভিযোগ করলে জানতে পারেন যে অনেক আগেই বই প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে শাখাটির পরিচালক আরিফ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া মূল শাখা থেকে প্রতিমাসে রুটিন দেওয়া হলেও ঠিকমতো পেমেন্ট না করায় অধিকাংশ দিন শিক্ষক ক্লাস নিতে আসতেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। সর্বশেষ এক সপ্তাহ ধরে আর কোনো ক্লাস হচ্ছে না এবং ওরাকল কোচিং সেন্টারের ইবি শাখা পরিচালকেরও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তানজিমুল ইসলাম নিলয় বলেন, একসঙ্গে ১০ হাজার ৩০০ টাকা পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য হলেও ওরাকল বিসিএস কোচিংয়ের সুনামের প্রতি আস্থা রেখে এতগুলো টাকা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা যা করেছে তা স্পষ্ট প্রতারণা। আগামী নভেম্বর নাগাদ ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলার আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন মুহূর্তে ক্লাস বন্ধ হওয়ায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি।
এদিকে ওরাকলের প্রধান শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরিফ আহমেদ চুক্তিভিত্তিক মালিকানা ভিত্তিতে কুষ্টিয়া ও ইবি শাখার কোচিং সেন্টার দুটি পরিচালনা করে আসছিলেন। চুক্তিভিত্তিক মালিকানার ক্ষেত্রে প্রধান শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট পরিচালককে শুধু কোর্সের বুকলেট ও মডেল টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলো সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রধান শাখাকে জনপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কোচিং পরিচালনায় বাকি সব আয়-ব্যয় সংশ্লিষ্ট শাখার পরিচালকের মালিকানাধীন থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইবি শাখার মতো কুষ্টিয়া শাখার ক্লাসও এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ। দুটি শাখায় প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই এখনও বুকলেটও পাননি।
অভিযোগের বিষয়ে আরিফ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যক্তিগত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ওরাকল প্রধান শাখার পরিচালক হাসান কবির জানান, আরিফ আহমেদ তাদের না জানিয়েই সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তারা। যেহেতু শিক্ষার্থীরা অফলাইন ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন, প্রয়োজনে তাঁকে শিক্ষার্থীদের অফলাইন সার্ভিস দিতে বাধ্য করা হবে। সেটা সম্ভব না হলে তারা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের তাদের অনলাইন কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করে নেবেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেটা করা হবে।