শিক্ষার্থীদের ইতিহাস জানানো জরুরি

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এ স্বাধীন বাংলাদেশ। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছিলো অসংখ্য ছাত্র জনতাকে। পৃথিবীতে আর কোনো জাতিকে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় এতো প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়নি। বাঙালি সংগ্রামী জাতি। অথচ বাঙালি জাতির সংগ্রামী ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে অবহিত নন।

’৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সময় আগামী প্রজন্মের কাছে বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছিলো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। এরপর আজও আমাদের শিক্ষার্থীদের জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শিখন ঘাটতি রয়ে গেছে। 

বাঙালি জাতির সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যথাযথভাবে না জেনে বেড়ে উঠেছে আগামী প্রজন্ম। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা পাক-হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা চলে গেলেও তাদের অনুসারীরা প্রশাসনের অভ্যন্তরসহ সর্বত্র সক্রিয়ভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা ইবলিশ শয়তানের মতো জাতির অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছেন। 

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে থেকে স্বাধীনতা বিরোধীরা জাতির সংগ্রামী ইতিহাস ও  ঐতিহ্য শিক্ষার্থীকে জানতে বা জানাতে কৌশলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এ অভিনব চক্রান্তের প্রথমটি হলো- বিদ্যালয়ের বার্ষিক ছুটির তালিকায় জাতীয় ও বিশেষ দিবসে ছুটি দেখানো। যার ফলে শিক্ষার্থীদের ওই দিবসগুলোতে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়। অথচ শিক্ষকদের উপস্থিতির জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়ে, জাতীয় ও বিশেষ দিবস উৎযাপনের জন্য বলা হয়ে থাকে। ওই দিবসগুলোতে ছুটি থাকায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি হয়ে থাকে অতি নগন্য। গুটি কয় শিক্ষার্থী রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকেন। এর ফলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চার ঘাটতি নিয়ে বেড়ে উঠছেন। মিডিয়ায় এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সাক্ষাতকারে এ বিষয়ে তাদের অজ্ঞতার চিত্র ফুটে উঠেছে। 

 

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা কেনো ভাবছেন না? এ প্রজন্মের শিক্ষকরাও বেড়ে উঠেছেন বিকৃত ইতিহাস জেনে। শিক্ষার্থীদের না জানার অপবাদ শিক্ষকদের মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। কেনো নানা অহেতুক অপবাদের প্রতিবাদে যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে না?  

প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকে জাতীয় ও বিশেষ দিবস নিয়ে তেমন আলোকপাত করা হয়নি। শিক্ষকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৌলিক একাডেমি (নেপের) পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঠদানে ব্যস্ত থাকেন। তাদের উচিত পর্ব, দিবসের শেষে বা পরের দিন তা নিয়ে সমগ্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলোচনাসহ মূল্যায়ন করা। যেমন জাতীয় দিবস, বিশেষ দিবস বা বিভিন্ন পর্ব, রোজার বন্ধ, ঈদ, কোরবানিসহ তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা ও তাদের শ্রেণিভেদে ধারণা দেয়া। শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, এর বাইরে প্রকৃতি, পরিবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করলে মেধার বিকাশ ঘটবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন।

এ প্রেক্ষাপটে, জাতির সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন সহজ করতে কিছু উদ্যোগ খুবই জরুরি। এজন্য জাতীয় ও বিশেষ দিবসগুলো বিষয়ে বিস্তারিত লেখা পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এসব দিবস বাৎসরিক ছুটির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে উৎসবমুখরভাবে সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও মূল্যায়ন করতে হবে। শিক্ষককে সর্তক থাকতে হবে যে, এ কর্মকাণ্ড থেকে কোনো শিক্ষার্থী যেন পিছিয়ে না থাকে। দিবসের গুরুত্ব অনুযায়ী দোয়া ও মাহফিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিযোগিতাসহ খেলাধুলা আয়োজন করতে হবে। 

শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে জ্ঞান অর্জন হোক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থী দেশ ও জাতির সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানার মাধ্যমে বেড়ে উঠুক। দূর হোক সকল ষড়যন্ত্র। 

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ 

 

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025770664215088