শিক্ষার্থীদের থেকে রসিদ ছাড়া বাড়তি ফি আদায়ের অভিযোগ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রসিদ ছাড়া বাড়তি ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার ঘোষিত টিউশন ফির বাইরে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আরও ৬০০ টাকার বেশি ফি আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় কোনো কমিটি না থাকায় প্রধান শিক্ষক এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনিয়ম করছেন। ফলে অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অভিভাবকরা।

বাড়তি ফি আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, অতিরিক্ত ফি সুনির্দিষ্ট খাতে নেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তী বছরে শিক্ষার্থীদের ফির সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৯০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। ইউএনও মিল্টন রায় প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি কমিটির সভাপতি।

সরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সীতাকুণ্ডে অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ফি। ওই সব প্রতিষ্ঠানেও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

করোনার প্রভাব শুরুর পর গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনার প্রভাবের কারণে মানুষের আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করে গত ২৪ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো ফি আদায় না করতে নির্দেশ দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, তার দুই ছেলে সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পড়ে। প্রথম দফায় দু'জনের জন্য এক হাজার ৩২০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু কোনো রসিদ দেওয়া হয়নি। এরপর আবারও ১০০ টাকা করে মোট ২০০ টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। 

তিনি বলেন, 'কয় টাকাই বা রোজগার করি। সংসার চালাতে দায় ঠেকে যাচ্ছে। তার ওপর ছেলেদের পড়াশোনার বাড়তি ফির বোঝা। এ ছাড়া রয়েছে করোনা মহামারির ভয়ংকর থাবা।'

অন্য এক অভিভাবক বলেন, সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় বাড়তি ফি আদায় করা হচ্ছে। ফেল করিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় তারা প্রতিবাদও করতে পারছেন না।

 

এ বিষয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একেএম মুমিনল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় কোনো কমিটি নেই। শিক্ষক কাউন্সিল বসে যে কোনো বিষয় ঠিক করে। এবারের ফিও তার সভাপতিত্বে শিক্ষক কাউন্সিল নির্ধারণ করেছে। তার দেওয়া ফি গ্রহণের বিবরণ মতে, বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির বেতন ১০ টাকা, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ১২ টাকা ও নবম ও দশম শ্রেণির বেতন ১৫ টাকা।

সে হিসাবে ষষ্ঠ শ্রেণির একজন ছাত্রের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের টিউশন আসে শুধু ৯০ টাকা। কিন্তু প্রত্যেক অভিভাবককে ৬১৫ টাকা করে গুনতে হয়েছে। পুরো নয় মাস স্কুল বন্ধ থাকলেও সেখানে নাশতা বাবদ দেখানো হয়েছে ২২৫ টাকা, বেতন ৯০ টাকা, বিবিধ ফি ১৮০ টাকা ও ই-হাজিরা চালু না করেই এর ফি ধরা হয়েছে ১২০ টাকা।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একেএম মুমিনুল হক বলেন, শুধু টিউশন ফি নেওয়ার সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার আগে থেকেই তারা ফি সংগ্রহ শুরু করেছেন। প্রায় সব শিক্ষার্থীর ফি নিয়ে ফেলেছেন। এখন আর ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে আগামী বছরে শিক্ষার্থীদের ফির সঙ্গে বাড়তি ফি সমন্বয় করা হবে। এ বিষয়ে এই প্রতিবেদককে লেখালেখি না করতেও বলেন তিনি।

ইউএনও মিল্টন রায় বলেন, বাড়তি ফি আদায়ের ব্যাপারে তার দপ্তরে কোনো অভিভাবক অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028810501098633