দীর্ঘ বিরতির পর রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ দিন স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেবেন শিক্ষকরা। নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের বরণ করে এ দিন পাঠদান শুরু করবেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষকরা।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর আবারও ক্লাসে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ক্লাসের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে তারা কিছু পরিকল্পনার কথা ভাবছেন। ক্লাসের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বরণ করে নেবেন তারা।
বেইলি রোড, আজিমপুর, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরায় ভিকারুননিসার চারটি শাখার প্রবেশপথের সব ফটক বেলুন ও জরি কাগজ দিয়ে সাজানো হবে। তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষকরা গেটের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন। ছাত্রীরা যখন প্রবেশ করবে, শিক্ষকরা করতালি ও ড্রাম বাজিয়ে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের ভেতরে প্রবেশ করানো হবে।
এ আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্রীরা এক ধরনের আনন্দ উপভোগ করবে। স্কুলের প্রতি তাদের আগ্রহ বেড়ে যাবে। তবে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনো শাখার দিবা ও মর্নিং শাখার প্রধানরা গেটে নয়, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুল বলেন, শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বরণ করতে চাই। ছাত্রীরা গেটের ভেতরে প্রবেশ করার সময় প্রত্যেকের হাতে একটি করে ফুল দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোববার স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানতে 'কঠোরতা অবলম্বনের' জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে সরকারের এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কারণে যেন কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বেড়ে না যায়, সেজন্যই এ কড়াকড়ি।
বৃহস্পতিবার সরকারের এ বার্তা সংশ্নিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রধানদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তাদের বলে দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে কোনোরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন বা গাফিলতি করা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালাতেও বলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রোববার খুলে দেওয়ার পর নজরদারি জোরদার করা হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতিদিনের হালনাগাদ তথ্য প্রতিদিনই সরকারকে পাঠাতে হবে। সংশ্নিষ্ট অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড ও মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানকে না জানিয়ে গোপনে হাজির হবেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।\হশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজধানীর নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েই আমাদের মাথাব্যথা বেশি। প্রতিষ্ঠানে ঢোকা ও ছুটির সময় বের হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বড় ধরনের জটলা তৈরি হয়ে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের করণীয় এরই মধ্যে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের খামখেয়ালিপনা সহ্য করা হবে না।