শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষার্থীরা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। তাদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় তার পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। আর সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করা; তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ কোনো সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। এ জন্য আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দোষ দেব না। কারণ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পুলিশ প্রবেশ করতে পারে না। তারা যা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরামর্শে করেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে অনেককে রক্তাক্ত করেছে। আর কথা উঠল- উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেছে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আছে; তারা কী করেছে? তারা শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এর সুষ্ঠু সমাধান কেন করতে পারল না?

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। ঘটনাটি সম্পর্কে গণমাধ্যমে যা জানতে পেরেছি, তাতে বিষয়টি এই পর্যায়ে আসার কথা ছিল না। ছাত্রীরা যখনই প্রতিবাদ শুরু করে, তখন উপাচার্য এটা সহজেই সমাধান করতে পারতেন। তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে ঘটনাটি এতদূর গড়াত না। শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি, সেটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন কিছু ছিল না। মূলত উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় ছোট একটা ঘটনা বড় আকার ধারণ করেছে। এতে তাদের অদক্ষতাই প্রমাণ পাচ্ছে। উপাচার্য একাই দায়ী নন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষক নেতা ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরাও এর দায় কি এড়াতে পারেন? শিক্ষার্থীদের কথা যারা বোঝেন না বা যারা ছোট ঘটনাকে বড় করে ফেলেন, তাদের নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের দাবি কি অযৌক্তিক ছিল? সংবাদপত্রে যা দেখলাম তাতে তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে হয়েছে। এই দাবিগুলো বেশি কিছু ছিল না। আবার এক পর্যায়ে প্রশাসন দাবি মেনে নিয়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর বল প্রয়োগের পর। কেন এই দাবিগুলো শুরুতেই মেনে নেওয়া হলো না? এখানে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, সেটা ভাবনার বিষয়। তাই এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত যেমন একাডেমিক, প্রশাসনিক, গবেষণা, জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী ইত্যাদি। আর যদি কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে অন্যায় বা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে; তদন্তপূর্বক সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ এখন যারা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, তারা মনে করেন, একবার যেহেতু নিয়োগ পেয়েছেন, সরকার চার বছরে আর তাদের এ পদ থেকে অপসারণ করবে না। এই বিশ্বাসে নানা রকম অন্যায় কাজে যুক্ত হয়ে যান অনেক উপাচার্য, যা বিগত সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে। যদিও আবার অনেক ভালো ও যোগ্যতাসম্পন্ন উপাচার্য দেখেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে একটি আইন হওয়া উচিত এমন- ১ থেকে ৫ বা ৭ শতাংশ মেধা তালিকার মধ্যে যারা থাকবে, তাদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া উচিত, যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে। এতে মেধাবীরা শিক্ষক নিয়োগে সুযোগ পাবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী কিনা, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক জায়গায় মেধাবীরা বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যা সংবাদপত্রে প্রকাশ। অযোগ্যরা নিয়োগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা গ্রুপের সৃষ্টি হয় এবং অনেক সময় তারা স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে। এই গ্রুপিংয়ের কারণে অনেক সময় উপাচার্যরা সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারছেন না। তাই যোগ্যতাসম্পন্ন ও গুণগত মান ঠিক রেখে শিক্ষক নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সমস্যার সহজেই সমাধান করা সম্ভব।

সর্বোপরি শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করুন; পাশাপাশি ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন। সিন্ডিকেট সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। তাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সঠিক পন্থা বের করতে পারলে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মঙ্গল হবে।

লেখক : মো. শফিকুল ইসলাম :সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051651000976562