করোনা মহামারির কারণে চরম আর্থিক সংকটে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বিআইজিডি এবং পিপিআরসির প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে করোনায় নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন প্রায় দুই কোটি পঁয়তাল্লিশ লাখ মানুষ। এমন অবস্থায় ক্রমাগত শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধি শিক্ষাকে নিয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত শ্রেণির নাগালের বাইরে! চলতি অর্থবছরে বাজেটে বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুন) ইতে্তফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়,এই করের বোঝা পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপরেই পড়বে। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের প্রধান উত্স শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি। শুধু উচ্চবিত্ত নয়; সরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত আসনের অভাবে বাধ্য হয়ে গরিব মধ্যবিত্ত ঘরের অনেক ছেলেমেয়েও এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হয়। অভিভাবকদের অনেকেই জীবনের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে সন্তানদের ভর্তি করে, যাতে তারা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। এমনিতেই শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায়ের জন্য মুখিয়ে থাকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি এই করোনাকালেও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ করার কোনো উদ্যোগ নেই। তাই আরোপিত কর যে শিক্ষার্থীদের থেকেই আদায় করা হবে, তা সহজেই অনুমেয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইন ২০১০-এ বলা হয়েছে, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অমুনাফাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু ভ্যাট আরোপ করা হয় এমন প্রতিষ্ঠানে যেখানে মুনাফার ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালিত হয়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট আরোপ করা শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকেই নির্দেশ করে। শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, শিক্ষা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের সংবিধানেও এর স্বীকৃতি রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এই করারোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশা করছি।
লেখক :এস সাহল আবদুল্লাহশিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়