শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি দ্রুত সমাধানের আহ্বান জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির ‘আঁতাত’ আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। রোববার জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি। এ সময় তার পাশের আসনে ছিলেন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। বক্তব্যের সময় হাসতে হাসতে এ কথাও বলেন জিএম কাদের। তখন পাশ থেকে রাঙ্গাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা গরিব। সবচেয়ে গরিব।’ বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিকে যৌক্তিক আখ্যা দেন। তিনি সরকারকে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার আহ্বান জানান। সংসদ সদস্যদের জন্য অবসরকালীন আর্থিক সুবিধার দাবি করেন তিনি। স্থানীয় সরকারে যারা আছেন, তাদেরও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান।

জিএম কাদের বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাসের মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবি করতেই পারেন। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের মানুষ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হলো কেন। তেলচালিত বাস বন্ধ হলো, সেটা মানলাম। কিন্তু গ্যাসচালিত বাস বন্ধ হলো কেন? তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ বা সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সারা দেশে পরিবহণ বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক নয়। আমাদের বিআরটিএ বলে একটা সংস্থা আছে, তারা কী করে। যাত্রীদের জিম্মি করে অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে যারা দাবি আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার উদাহরণ দেখছি না।

বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, মালিক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে। ডিজেলচালিত বাসের জন্য একটা আর গ্যাসের জন্য একটা। কিন্তু সব বাসে একই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিবহণ সেক্টর আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করছে। আদৌ কি সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে এখানে? নাকি মালিক-শ্রমিক সমিতি করছে। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি এই খাতের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করছেন?

জিএম কাদের সংসদ সদস্যদের জন্য অবসরকালীন আর্থিক সুবিধার দাবি করে বলেন, আমাদের অনেক সদস্য ১৫-২০-২৫ বছর ধরে সংসদে আছেন। তারা সৎভাবে কাজ করেন। প্রশাসনের বা অনেক জায়গায় অবসরের পর আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। অনেক দেশে এমপিদের অবসর সহায়তা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা করার দাবি করছি। তাহলে যারা সৎভাবে কাজ করতে চান, তারা মানবেতর জীবনে পড়বেন না। তিনি বলেন, অবসরের পর কর্মকর্তারা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেন। এমপিরা পারেন না। সচিবদের দেওয়া হচ্ছে। অন্যদের দেওয়া হচ্ছে। আর্মিদের দেওয়া হচ্ছে। এমপিরা পান না। স্থানীয় সরকারে যারা আছেন, তাদেরও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নথি চুরির ঘটনা তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম নিয়ে অনেকদিন ধরে কথা বলছি। দুর্নীতি দূর হয়েছে-এমন মনে হচ্ছে না। সম্প্রতি কেনাকাটা সংক্রান্ত ১৭টি নথি গায়েব হয়ে গেল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেওয়া হলো, ফাইল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি খুব কি বেশি প্রয়োজন ছিল। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে কমানো হয় না। কিন্তু বাড়লে বাড়ানো হয়। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমবে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশ্ববাজারে কমলে দেশের বাজারেও দাম পুনর্র্নিধারণ করা উচিত। তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, বেকারত্বের হার বাড়ছে। খোলাবাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ চোখে পড়ছে না। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। বেকারত্ব বাড়ছে, দারিদ্র্য বাড়ছে, আয় কমছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। তিনি বলেন, রান্নার জ্বালানি হিসাবে গ্রাম ও শহরের অনেক পরিবার এখন এলপিজি ব্যবহার করে। গত ৫ মাসে এলপিজির দাম খুচরা পর্যায়ে সিলিন্ডারপ্রতি ৪০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির ব্যয়ভার অনেকেই বহন করতে পারবে না।

তেলের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, সরকার ৩ নভেম্বর তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, জ্বালানি একটি কৌশলগত পণ্য। এর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং সব ধরনের সেবার দামের ওপর পড়ে। আর পরিকল্পনাহীন মূল্যবৃদ্ধি অনেক সময় বিকাশমান অর্থনীতিকে স্থবির করে দেয়। তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একদিকে সরকারের অব্যাহত প্রণোদনা, অন্যদিকে তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি কিছুটা সাংঘর্ষিক মনে হয়। দ্রব্যমূল্যের সিমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, করোনাকালীন নতুনভাবে দরিদ্র হয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্স সেন্টারের (পিপিআরসি) এক যৌথ জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে মোট শ্রমশক্তির আকার ৬ কোটি ৪০ লাখ। গত বছর চাকরি হারিয়েছে ৪.৩ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ জন। বেসরকারি সংস্থার হিসাবে এই সংখ্যা ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সমালোচনাকারী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ক্ষমতা গ্রহণের আগে শপথ গ্রহণ করেন-‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব।’ ফলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী যারা বলেছেন ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম মানি না। তারা শপথ ভঙ্গের দায়ে দোষী, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা যায়।

তিনি বলেন, আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্পর্কে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের একজন কিছু কটূক্তি করেছেন। এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারে বলতে চাই, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেছেন, তখন সাধারণ জনগণ উল্লাস প্রকাশ করেছে। জেলে থেকেও তিনি জাতীয় নির্বাচনে ৫টি আসনে পরপর দুইবার জয়লাভ করেছেন। যখন তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন, তখন প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ তার জন্য দোয়া করেছেন। মৃত্যুর পর চারটি জানাজায় লাখ লাখ মানুষের জমায়েত হয়েছিল। দুই-একজন এরশাদ সম্পর্কে কটূক্তি করলেই এই রকম একজন সম্মানিত মানুষের সম্মান নষ্ট হবে, সেটি আমরা মনে করি না। বরং যারা এই রকম মন্তব্য করেন, তাদেরকে জনগণ স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে গণ্য করেন না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি) সম্পর্কে তিনি বলেন, এমসিসি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-২২ প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাদের জরিপের ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১৬টি লাল (খারাপ) তালিকায় রয়েছে। এরমধ্যে অনেক বিষয় ১১তম সংসদের চলতি অধিবেশনের আগে কোনো না কোনো অধিবেশনে আলোচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদে আলোচিত বিষয়গুলো সমাধানে আরও বেশি মনোযোগী হলে অনেক কিছু লাল তালিকার বাইরে রাখা সম্ভব হতো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067338943481445