অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের শ্লথগতিতে জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ফিকে হচ্ছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বাঁধা হচ্ছে প্রশাসনের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা কর্মচারী। পতিত আওয়ামী সরকারের প্রশাসনকে সঠিক পথে আনতে সরকার বার্থ হচ্ছে বলে জনগণ মনে করছেন । অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে প্রশাসনের কারণেই হবে। আর ব্যর্থ হলে উপদেষ্টা,ছাত্র -জনতা তথা দেশবাসীকে চরম মাশুল দিতে হবে। নাচতে নেমে ঘোমটা দিয়েন না। যেখানেই কাজের ফাঁকি, দুর্নীতি ও শৈথিল্য দেখা যাবে, অ্যাকশনে যান।
জুলাই' ২৪ বিপ্লব পরবর্তী শিক্ষার চারটি স্তরের মধ্যে উচ্চ শিক্ষায় অনেকটা স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে এসেছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে চলতি শিক্ষাবর্ষের অবশিষ্ট সময় পতিত সরকারের রেখে যাওয়া কারিকুলামের কিছু সংস্কার করে শিক্ষাবর্ষের কাজ সমাপ্ত করা হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা সরকারের জন্য এসিড টেস্ট। পাঠ্যসূচী প্রণয়ন, পাঠ্যপুস্তক সময়মত শিক্ষার্থী হাতে পৌঁছানো, শিক্ষা ব্যয় কমানো, নকল মুক্ত পরীক্ষা, শিক্ষকদের দাবি দাওয়াসহ বহুবিধ সমস্যা ফেস করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে সময়মত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে কিনা সংশয় আছে। আগামী সেশন শুরুর যে সময় আছে সে সময়ের মধ্যে ক্লাস শুরুর পূর্ব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা শিক্ষা উপদেষ্টার জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। নতুন শিক্ষাক্রম নামে বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার শিক্ষার যে বেহাল দশা করে গেছে তা উত্তরণ সময় সাপেক্ষ। করোনায় শিক্ষার বিশাল ক্ষত সৃষ্টির ফলে শিক্ষার্থীর ভয়াবহ লার্নিং গ্যাপ তৈরি হয়েছিলো।
শিক্ষার্থীর লার্নিং গ্যাপ পূরণ না করেই নতুন শিক্ষাক্রম চালুর ফলে লার্নিং গ্যাপ আরও বেড়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে যোজন- যোজন দূরে সরে যায়। পাঠ্য পুস্তকে শিক্ষার আকর্ষণীয় কোনো কিছু না পেয়ে ক্লাস ও বই বিমুখ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষার্থী শিখন ঘাটতি নিয়েই পরবর্তী ক্লাসে চলে যাচ্ছে। করোনা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার যে রেওয়াজ চালু হয়েছিলো তা থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। নুতন কারিকুলামে ২০২৪ এ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণিতে আবারও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিগত আওয়ামী সরকারের জনবিচ্ছিন্ন কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে উঠা অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মতৎপরতার ওপর নির্ভর করছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা সংস্কার কমিটি গঠন করে বাতিল করা হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের কোনো সুবাতাস এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ নতুন বছরের আগমনের বার্তা দিচ্ছে । আমাদের শিক্ষা উপদেষ্টা প্রবীণ শিক্ষাবিদ। যে আমলারা কাজের গতি বাড়িয়ে দেয়ার কথা তা না করে স্পিড ব্রেকার সৃষ্টি করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার কথা বললেন। কিন্তু কমিটি ভেঙ্গে না দিয়ে শুধু সভাপতি পরিবর্তন করে বাকি সদস্য বহাল রাখা হয়েছে। যে কমিটিকে বলা যায় প্রশাসন - আওয়ামী লীগ কমিটি। ছাত্র জনতার দাবি হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা। ছাত্র -জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে ছোট বড় আমলারা। এদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হলে অন্তর্বর্তী সরকারও ব্যর্থ হবে, বিফলে যাবে ছাত্র জনতার আত্মত্যাগ। শিক্ষা সংস্কার কমিটি দ্রুত গঠন করা দরকার। বিপ্লবের চেতনাধারী সৎ,কর্মঠ,দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করলে কাজের গতি বাড়বে।
শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা থেকে থেকে জানা যায় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের কারিকুলামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কম সময়ে পাঠ্যসূচির জটিল কাজটি সম্পাদনা সহজ হবে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের কারিকুলাম কয়েক দফা সংশোধন করে অনেকটা যুৎসই কারিকুলামে রূপান্তর করা হয়েছিলো। তবে সেটাতো একযুগ আগের। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের কারিকুলামকে সংস্কার করে যুগোপযোগী করা যেতে পারে।
এ ক্ষেত্রে সংস্কার কমিটিকে পাঠ্যসূচিতে ইতিহাস বিকৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতির আঘাত দেয়ার বিষয়গুলো সর্তকতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় প্রাথমিকের শিক্ষক ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হলেও আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ের মোক্ষম সময় বিবেচনায় মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে । যা ইতোমধ্যে শিক্ষকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকারিকরণ দাবি নিয়ে সহসা মাঠে নামার আলামত দেখা যাচ্ছে। বন্যা, তাপপ্রবাহ,আন্দোলন ও বিপ্লবের কারণে শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবার শিক্ষকদের আন্দোলনে যেনো শিক্ষার ক্ষতি না হয় সে দিক বিশেষ নজর রাখতে হবে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণ দাবি যৌক্তিক। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকারিকরণ সম্ভব না হলেও বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা বৃদ্ধিকরণ এবং বদলি প্রথা চালু করা যেতে পারে। আগামী শিক্ষাবর্ষ উৎসবমুখর, সফল ও স্বার্থক করতে সরকারকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।
লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)