দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় মানুষের আবাসস্থলের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের ওপর।
বন্যাপীড়িত এলাকার পানি নামলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, বন্যায় বইপত্রসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এমন পরিস্থিতিতে পাঠদান থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন তারা। অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বন্যায় অন্তত ১২শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং অন্তত দুই লাখের বেশি এইচএসসি পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে পরীক্ষার্থী ছাড়াও এসব এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত ফেনীতে ২৮১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৮০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এর আগেও ভারি বৃষ্টিতে স্কুলের মাঠ ডুবলেও এবারই প্রথম আমাদের নিচ তলার সব ক্লাস ডুবে ছিলো।
বন্যায় অনেক মানুষ আমাদের স্কুলসহ আশেপাশের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। পানি কমার পর স্কুলে গিয়েছিলাম, সব উলটপালট হয়ে আছে। সবকিছু ঠিকঠাক করে আবারো পাঠদান শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।
অভিভাবকেরা বলছেন, বন্যার শিক্ষার অনাকাঙ্ক্ষিত এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
দিদারুল আলম নামে এক অভিভাবক বলেন, জুলাই মাসে সরকার পতনের আন্দোলন থেকে শুরু করে আগস্টের বন্যায় শিক্ষাব্যবস্থা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন অনেক এলাকায় পানি নেমে গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক।
বন্যা কবলিত এলাকার বেলাল হোসেন নামে এক মাধ্যমিক শিক্ষার্থী বলেন, বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। বইপত্র কিছুই বাঁচানো যায়নি। এক সপ্তাহ আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। পানি কমার পর বাড়িতে গিয়ে দেখি সব বইখাতা ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত বন্যায় ১ হাজার ২০৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ টাকা। এগুলোর মধ্যে ৫৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনই পাঠদান চালু করা সম্ভব হবে না।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের মোট ৮৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৪ কোটি ৯৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ অঞ্চলের পাঠদান বর্তমানে চলছে ৬১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর পাঠদান চালু করা যাবে না ২৫১টিতে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। জেলাটিতে ৫৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ছাড়া ফেনীতে ২৮১টির ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৮০০ টাকা ও চট্টগ্রামে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সিলেট অঞ্চলে মোট ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ অঞ্চলে ২৮টি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলমান আছে।
কুমিল্লা অঞ্চলে মোট ৩৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ অঞ্চলে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলমান আছে। তবে ৩১৪টিতে পাঠদান চালু করা যাবে না।
এ অঞ্চলে লক্ষ্মীপুর ৫৪টি, চাঁদপুরে ৪০টি, কুমিল্লায় ২৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১৭টি চলমান আর ২২৩টি পাঠদানের অযোগ্য। চাঁদপুরে ৩টি চলমান আর ৩৭টি পাঠদান অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদার বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তথ্য ও মেরামতের বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখেছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের আসবাবপত্র, ওয়াশ ব্লক, মাঠ যথাসময়ে সংস্কার ও মেরামত করা না হলে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি
ফেনী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ বলেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ভবনে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছিলো। বন্যা ও মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো স্বাভাবিক রূপে আসেনি। এরপরও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার জন্য। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
শিক্ষা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রামপর্যায়ে যাদের বইপত্র নষ্ট হয়ে গেছে, স্কুলগুলোকে তালিকা প্রণয়নের জন্য বলা হয়েছে। তালিকা হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে পাঠদান স্বাভাবিক করা হবে।