শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু একক খাত হিসেবে শিক্ষায় এই বরাদ্দ ১২ দশমিক ০১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) এই বরাদ্দ ছিল ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরেই শিক্ষার বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশেই ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সামগ্রিক বাজেটের আকার বাড়ায় টাকার অঙ্কে বরাদ্দ প্রতি বছরই কিছুটা বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরেও টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়ছে ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য আগামী অর্থবছরে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী  বলেন, ‘সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও শিক্ষায় জিডিপির ৪ শতাংশ বা বরাদ্দের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর প্রতিফলন বাজেটে নেই। আমরা শিক্ষাকে একক খাত হিসেবে প্রত্যাশা করি, যাতে দিকনির্দেশনাগুলো সুস্পষ্ট হয়। কিন্তু সেটাও বাজেটে নেই।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষায় কভিডকালীন যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে তেমন কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা দরকার। এ খাতে দেশি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হলেও কতটুকু সহজলভ্য হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। এছাড়া মিড ডে মিল, প্রাক-প্রাথমিকের গুরুত্ব আমরা বাজেটে দেখিনি। কারিগরিকে অগ্রাধিকার খাত বলা হলেও এই বিভাগে বরাদ্দ বাড়েনি। মেডিকেল ছাড়া অন্যান্য শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণায় জোর দেখিনি। মধ্যবিত্তের সন্তানরা বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়লেও তাদের টিউশন ফির ওপর থেকে করের বোঝা কমানো হয়নি।’ 

গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষায় বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ছয় ভাগে যেতে হবে, আমরা তিন ভাগে আছি। ২০০৬ সালে আমাদের সারা দেশের যা বাজেট ছিল এখন শিক্ষা বাজেটই তার চেয়ে অনেক বেশি। শিক্ষায় আমরা অনেক বিনিয়োগ করছি আরও অনেক বিনিয়োগ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি বড় বড়  যে মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে, সেগুলো যেমন আমাদের যোগাযোগের জন্য, দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার, তেমনি পরবর্তীতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা। সেটিই হবে বড় মেগা প্রকল্প।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আমরা নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শিক্ষা খাতে ব্যয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পরিবীক্ষণের দিকেও আমরা বিশেষ নজর দেব।’

বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান। আর নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও শিক্ষকদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসবের কোনো উল্লেখ নেই আগামী বছরের বাজেটে। এমনকি কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষার অগ্রাধিকারের কথা বলা হলেও এ খাতে বরাদ্দ তেমন বাড়েনি।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি ২০১০-এর সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষায় আমরা আরও বরাদ্দ চাই। কিন্তু বাস্তবতা হয়তো ভিন্ন। করোনার পর সারা পৃথিবী বদলে গেছে। এখন আমাদের বাস্তবমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শর্টকোর্সের মতো বিশেষ কিছু কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান খাতে সরকারের যে বরাদ্দ আছে, এর সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় করতে হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027310848236084