নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্তরা দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা এ টাকা তাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিয়েছেন।
গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষিকা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
অভিযুক্তরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জয় পাল এবং বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মারুফুল হাসান মারুফ। জয় পাল শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক এবং মারুফ ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। তারা উভয়ে আল-বেরুনী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকায় বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে আসেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে নোবিপ্রবির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দেন এবং ব্যাগ থেকে নিজের আইডি কার্ড বের করে দেখান। এরপরও তাদের বহিরাগত আখ্যায়িত করে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় গোপনে অভিযুক্তদের ছবি তুলে রাখেন তিনি।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা জাবির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমতাহানা মৌকে ঘটনাটি জানান। মুমতাহানা মৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া স্বাধীনের সহায়তায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করলে অভিযুক্তরা বাংলা বিভাগে এসে ক্ষমা চান এবং বিকাশের মাধ্যমে আদায়কৃত টাকা ফেরত দেন।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষক মুমতাহানা মৌ বলেন, ওই শিক্ষিকা আমার পূর্বপরিচিত নয়। তবে ঘটনাক্রমে বিষয়টি জানতে পেরে সহকর্মী হিসেবে আমি সেখানে যাই। মুঠোফোনে ধারণকৃত ছবি দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে সক্ষম হই। তারা দুজনই ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। পরে বিষয়টি প্রক্টরকে জানানো হয়েছে।
বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ঘটনাটির সাথে আমার বিভাগের একজন শিক্ষার্থী জড়িত। ওই শিক্ষার্থী আমার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর মৌখিক অভিযোগ করে এসেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয় পাল জানান, বিকেলে আমরা ফুটবল খেলা শেষে হলে ফিরছিলাম। তখন দুজনকে ধূমপান করতে দেখে পরিচয় জানতে চাই। এ সময় তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। তখন আমরা নিরাপত্তা শাখায় যোগাযোগ করতে চাইলে তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মিষ্টি খাওয়ার জন্য আমাদের টাকা দেন।
এখানে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমরা ভুল বুঝতে পেরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিয়েছি এবং বিভাগের শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনাটি জানার পর ওই শিক্ষিকার সাথে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি লিখিত অভিযোগ করতে চাননি। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি সম্পর্কে উপাচার্য স্যার অবগত আছেন। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠাব।