দৈনিক শিক্ষাডটকম, মোংলা : মোংলায় আউট অফ স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রামের আইরিন বিশ্বাস নামে এক নারী শিক্ষিকাকে ঘরে আটকে কু-প্রস্তাব দেয়ায় ঘটনায় এনজিও সিডোপের নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই শিক্ষিকা নিজে বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানায় অভিযোগ দেয়ার এ ঘটনা শোনার পরপরই কিছু দালাল চক্র দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করারও চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ ওই শিক্ষিকার। তবে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা ও আইনি সহায়তার আশ্বাস থানা পুলিশের।
মোংলা থানায় দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক স্কুল থেকে ঝরে পড়া ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন সরকার। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে মোংলা, রামপালও ও মোড়েলগঞ্জ এ ৩টি উপজেলার পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নে ১১৫টি স্কুলের অনুকূলে ৩ হাজার ৪৫০ জন ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা প্রদানের জন্য শিক্ষক ও সুপারভাইজার নিয়োগ দেয় এনজিও সিডোপ।
শুরু থেকে তাদের বেতন-বাতাদি এককালীন দেয়ার কথা বলে ব্যাংকের চেক ও অন্যান্য কাগজ পত্রে স্বাক্ষর নেয় এনজিওর নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস ও তার কর্মকর্তারা। পরে তাদের বেতনের টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন লোকজন দিয়ে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকিও দিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। এনজিও সিডোপ’র কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের বেতন ও স্কুল ঘর ভাড়া কোনটাই না দেয়ায় অনেক স্কুল বন্ধ করে দেয় ঘর মালিক। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে সরকারের এ প্রকল্পের কার্যক্রম এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পথ শিশুরা। বেতন-ভাতাদি না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন শিক্ষক। কোন উপায় না পেয়ে কিছু দিন আগে দুদক ও জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয় শিক্ষকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত কুমার মোংলা উপজেলার ছবি হাজরা ও রোজি সরদারসহ কয়েকজন লোক দিয়ে এ সব শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেতন-বাতাদি নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি না করার জন্য সাঁশিয়ে আসে।
এরইমধ্যে ২২ ডিসেম্বর এনজিও সিডোপ’র নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস নারী শিক্ষিকা আইরিন বিশ্বাসকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার খুলনার মুজগুনি আবাসিক এলাকায় নিজ বাড়িতে বড় দিন উপলক্ষে বেতনের টাকা নেয়ার জন্য আসতে বলে। ২৩ ডিসেম্বর দুপুর ৩টার দিকে প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের খুলনার বাড়ি যায় শিক্ষিকা আইরিন বিশ্বাস। বেশ কিছু সময় তাল বাহানা করে সন্ধ্যার দিকে ঘরে কেউ না থাকার সুবাদে ঘরের দরজা বন্ধ করে বেতনের টাকাসহ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে ওই শিক্ষিকাকে কু-প্রস্তাব দেয় এনজিও নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত কুমার। এতে সে রাজি না হয়ে ডাক চিৎকার দিলে দ্রুত দরজা খুলে দেয় এবং এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি দেয় প্রশান্ত কুমার।
বাড়ি থেকে বের হয়ে তাৎক্ষনিক এই প্রকল্পের লিড এনজিও “সুখি মানুষ” কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি অবহিত করেন এবং এনজিও সুখি মানুষ কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু বিচার করবেন বলে আশ্বাস্ত করেন। শনিবার রাতে প্রশান্ত কুমার তার লোক দিয়ে চাকরিচ্যুত করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিলে তাৎক্ষনিক ঘটনাটি থানা পুলিশকে জানায় এবং এদিন দুপুরে শিক্ষিকা আইরিন বিশ্বাস বাদী হয়ে এনজিও সিডোপ’র নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসকে আসামি করে মোংলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
এ ঘটনায় নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
তবে এনজিও প্রতিষ্ঠানটির বিভাগীয় সমন্বয়কারী মি. এ্যালেক্স বালা বিশ্বাস বলেন, ‘ঘটনাটি লোক মারফত জানতে পেরেছি। আমি বড় দিনের ছুটিতে থাকায় এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে আসল ঘটনা কি? তা খোঁজখবর নিলে জানা যাবে।’
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম জানান, খুলনায় একটি এনজিও পরিচালকের বাসায় এক শিক্ষিকাকে নিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।