শিখন ঘাটতির প্রভাব শ্রমবাজারে পড়ার শঙ্কা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

করোনা মহামারির সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষায় হওয়া ক্ষতি পূরণে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা না নিলে তা দীর্ঘমেয়াদি হবে। ভবিষ্যতে এর প্রভাব শ্রমবাজারে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তাই শিখন ঘাটতি পূরণে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের তাগিদ দিয়েছেন তারা।

করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন গবেষকদের একজন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আরেক গবেষক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা নিয়ে করা এ গবেষণা করেছে এনসিটিবি। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় শেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি বেড়েছে।

প্রতিবেদনে শিখন ঘাটতি পূরণে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও এনসিটিবি মিলে যৌথ পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এই গবেষণা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে। দেশের চলমান মেগা প্রকল্পগুলো শেষ হলে শিক্ষায় মেগা প্রকল্প হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এ গবেষণা নিয়ে কড়া আপত্তি তোলেন। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়তে পারেনা বলে তথ্য এ গবেষণা প্রতিবেদনে উপস্থাপিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ তথ্য তিনি মানেন না। এ গবেষণা সঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, করোনাকালে দীর্ঘ ১৮ মাসে যে শিখন ঘাটতি হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। গবেষণায় পঞ্চম শ্রেণিতে বেশি শিখন ঘাটতির যে কথা হয়েছে, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন তিনি।

শিখন ঘাটতি পূরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষায় মানের সংকট আগে থেকেই ছিল। করোনার কারণে সেটি হয়তো আরেকটু বেশি হয়েছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, করোনাকালে শিক্ষায় যে বিরাট ক্ষতি হয়েছে, সেটি স্বীকার করতে যেন একটু ইতস্তত ছিলো। এখন গবেষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হলো যে ক্ষতি হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি গবেষণায় একই ধরনের শিখনঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তাই নিরাময়মূলক কাজ না করলে ক্রমবর্ধমান এই ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, এখন যারা মাধ্যমিকে আছে এবং যাদের শিখন ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে। ১০ বছর পর তারা শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে। তারা কোন ধরনের শ্রমে বা কাজে ঢুকবে, সেটি অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যাবে এই সময়ে তারা কী ধরনের শিক্ষা পাচ্ছে, তার ওপর।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক) এ কে এম রিয়াজুল হাসান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক দিলীপ কুমার বণিক, ইউরোপিয় ইউনিয়নের কর্মকর্তা মরিজিও সিয়ানসহ অনেকে।


শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024998188018799