ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে দফায় দফায় মারধরের অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্তরা মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
গতকাল রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কয়েক দফায় ওই শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালান ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম শাহরিয়াদ মিয়া সাগর। তিনি ২০১৯-২০ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ফোনে এক জুনিয়রের সঙ্গে কথা বলার জেরে গতকাল রোববার ৪০০৮ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে তারা সারা রাত আমার ফোন চেক করে। একপর্যায়ে আমার কান ও হাতসহ দেহের বিভিন্ন অংশে কাঠ দিয়ে মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে জেরা করা হয়। আমার সঙ্গে আর কে কে জড়িত তা জানাতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন মারধরকারীরা। এরপর সকালে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলে সকালে আরেক দফা বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মারধর করা হয়।
শাহরিয়াদের অভিযোগ, তাকে সবচেয়ে বেশি মেরেছে সুজন, তুহিন আর মাজেদ। তিনি বলেন, শুধু আমাকে নয়, মাহমুদ নামের এক জুনিয়রকেও মারধর করে আমাদের সেশনের রাজু, শুভ ও প্রান্ত।
অভিযুক্তরা হলেন, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাজেদুর রহমান, গণযোগাযোগ উপ-সম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, সাহিত্য সম্পাদক ইউসুফ তুহিন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বায়েজিদ বোস্তামী, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পিয়ার হাসান সাকিবসহ আরও বেশ কয়েকজন। অভিযুক্তরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।
তানভীর হাসান সৈকত দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ওই শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তবে ছাত্রলীগ মারধরের রাজনীতি করে না। কেউ যদি মারধরের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকে, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওই শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে বলে জেনেছি। সে নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছে। সে এখন অনুতপ্ত। সে বলেছে, আমি এটা বুঝতে পারিনি। যেহেতু সে স্বীকার করেছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী বিষয়টি প্রক্টর দেখবেন।
শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যদি মারধরের বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রক্টরিয়াল টিম। ওই শিক্ষার্থী প্রক্টরিয়াল টিমকে মুচলেকা দিয়েছে এবং পরবর্তীতে কারো কিছু জানার থাকলে পরবর্তীতে যেন সহযোগিতা করা হয় এ মর্মে তাকে স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে।