শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করাই হোক বিশ্ব শিশু দিবসের অঙ্গিকার

সন্তোষ দাস |

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা বড় হয়ে দেশ-জাতি এমনকি বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। তাই শিশুকে সুন্দর, সুস্থ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের অর্থাৎ বড়দের একান্ত কর্তব্য। পাশাপাশি শিশুদের কিছু অধিকার আছে, সেগুলি নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব। শিশুর অধিকার বলতে শিশুর স্বাভাবিকভাবে বড় হওয়ার জন্য জন্মের পর থেকে প্রতিটা শিশুর যেসব জিনিস বা সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তা শিশুকে ভোগ করতে দেওয়াই হচ্ছে শিশু অধিকার। অর্থাৎ যা ন্যায্য পাওনা তা চাওয়ার প্রয়োজন নেই। সেগুলো এমনিতেই তারা পাবে। শিশুর মৌলিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে-বেঁচে থাকার অধিকার, বিকাশের অধিকার, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার অধিকার, অংশ গ্রহণের অধিকার ইত্যাদি।

শিশুদের এসব অধিকার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার জন্য প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার পালিত হয় বিশ্ব শিশু দিবস। তবে বিভিন্ন দেশ তাদের বিশেষ কোনো দিবসেও জাতীয় শিশু দিবস পালন করে থাকে। যেমন-ভারতে ১৪ নভেম্বর পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরুর  জন্মদিনটিকে তারা শিশু দিবস হিসেবে পালন করে। ১৯৬৪ সাল থেকে তারা এভাবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশে ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯৬ সাল থেকে এই দিনে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এমনিভাবে অন্যান্য দেশও নিজস্ব বিশেষ কোনো দিবসে তাদের জাতীয় শিশু দিবস পালন করে থাকে। তবে উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ এপ্রিল তুরস্কে প্রথম শিশু দিবস পালিত হয়েছিল। 

দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনে শিশুদের গুরুত্বকে মনে করে দিনটি পালিত হয়। তাছাড়া শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সব মানুষকে আরও সচেতন করার প্রয়াসেও দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। শিশুরা যাতে সঠিক শিক্ষা পায়, নিজ নিজ মাতৃভূমির ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে, তারা যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়- এসব প্রচার ও কর্মসূচি পরিচালিত হয় শিশু দিবসে। 

জাতিসংঘের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছর পর্যন্ত সবাই শিশু বলে গণ্য হবে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রতিটা শিশু কিছু নির্দিষ্ট অধিকার ভোগ করবে এবং প্রতিটা সদস্য রাষ্ট্র শিশুদের সেই অধিকার নিশ্চিত করবে। পৃথিবীর সব ধরনের শিশু সুস্থ-স্বাভাবিক, প্রতিবন্দি, এতিম প্রভৃতিরা যে সব অধিকার ভোগ করবে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে।

এর থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
১. প্রতিটা শিশুর সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। ২. প্রতিটা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করা। ৩. শিশু অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। ৪. শিশু বিষয়ে যে কোনো ধরনের কার্যক্রমে শিশুর স্বার্থই হবে প্রথম ও প্রধান বিবেচনার বিষয়। ৫. শিশুর মা-বাবা ও আইনগত অভিভাবক শিশুর কল্যাণে সব ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন কি না তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ৬ শিশুর মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৭. শিশুকে কোন প্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। ৮. শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা। ৯. প্রতিটা শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক উন্নতিসহ তার উন্নত জীবন নিশ্চিত করা। ১০. শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করা এবং সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও সহজলভ্য করা।

জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে বর্ণিত অধিকারগুলো বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের প্রতিটা শিশুই সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে এবং সে তার নিজ দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য পৃথিবীর গুটিকয়েক উন্নত দেশ ছাড়া প্রায় সবদেশেই শিশুরা কোনো না কোনোভাবে অবহেলিত ও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতন নৈমিত্তিক ঘটনা। জেনে,না জেনে বা বাধ্য হয়ে আমরা অহরহ শিশুদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছি। তাই শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করাই হোক বিশ্ব শিশু দিবসের অঙ্গিকার।

লেখক : সন্তোষ দাস, প্রভাষক, সরকারি ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ, ফকিরহাট,বাগেরহাট


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030558109283447