দেশের যেসব স্থানে শৈত্যপ্রবাহ চলছে বা তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসবে সেসব এলাকার স্কুল বন্ধ রাখা যাবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে ওই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। গতকাল বুধবার বরিশাল, ঈশ্বরদী, সীতাকুণ্ড, বান্দরবান, চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলেও বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার যথারীতি ক্লাস চলবে।
এদিকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিয়ে তালগোলের জেরে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার মাধ্যমিক পর্যায়ের হাইস্কুল ও মাদরাসায় ক্লাস না চললেও স্কুলে যেতে হবে প্রাথমিকের খুদে শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে আঞ্চলিক উপপরিচালকদের। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে শীতের তীব্রতা বিবেচনায় স্কুল বন্ধ থাকবে না খোলা থাকবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সরচরাচর দেশের কোনো স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামতে দেখা যায় না।
আবাহওয়া অধিদপ্তরের বুধবারের হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ জেলার হাইস্কুল ও মাদরাসাগুলো বৃহস্পতিবার বন্ধ ঘোষণা করা হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার জেলা সব হাইস্কুল ও মাদরাসা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে দুই শিফটের স্কুলগুলোকে দেরিতে ক্লাস শুরু করতে বলা হয়েছে।
তবে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা আছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামতে স্কুল বন্ধের জন্য। তাই আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস চলবে।
গতকাল বুধবারের হিসেবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ উপজেলার হাইস্কুল, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বৃহস্পতিবার খোলাই থাকছে। বুধবার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্কুল বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা পায়নি বলে জানিয়েছে।
সীতাকুণ্ডের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা আলম সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে ক্লাস বন্ধ করা হবে। বৃহস্পতিবারের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ক্লাস-চলবে না বন্ধ থাকবে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সীতাকুণ্ড উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুচ্ছোফার সঙ্গে তার দাপ্তরিক মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
গতকাল বুধবার পাবনার ঈশ্বরদীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বৃহস্পতিবার উপজেলার হাইস্কুল, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বৃহস্পতিবার খোলা থাকবে।
ঈশ্বরদীর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ভোরের দিকে তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়েছে বলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার আবহওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন। তাই স্কুলে ক্লাস চলবে।
ঈশ্বরদীর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী তাপমাত্রা বাড়ার কথা। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা থাকবে। তাই এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত ক্লাস চলবে। তবে সকালে যদি তাপমাত্রা কম থাকে সে ক্ষেত্রে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বান্দরবানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল সারাদেশে সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো। তবে বৃহস্পতিবার জেলার হাইস্কুল, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বৃহস্পতিবার খোলা থাকবে।
বান্দরবানের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, গহীন অরণ্যে তাপমাত্রা নেমে এলেও লোকালয় বা শহরের আশপাশে তাপমাত্রা বেশি ছিলো। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে বলেও কেউ জানাননি। তাই ক্লাস চলবে। তবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কম আছে এ খবর পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বান্দরবানের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, রাতে তাপমাত্রা কম থাকলেও সকালে রোদ ছিলো। তাই তাপমাত্রা বেড়েছে। ফলে ক্লাস চলবে। তবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল সিলেটের শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে উপজেলার হাইস্কুল, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বৃহস্পতিবার খোলােই থাকবে।
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বর্ধন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, রাতে তাপমাত্রা কম হলেও সকাল দশটার পর তা বেড়ে যায়। তাই বৃহস্পতিবার ক্লাস চলবে। তবে আমরা সার্বিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণে রাখছি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার আমাদের নিয়ে সভা করেছেন। যদি সেরকম পরিস্থিতি হয় আমরা ব্যবস্থা নেবো। কিছু স্কুল সকাল ৯টায় শুরু হতো সেগুলোকে সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু করতে বলা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যে নির্দেশনা আমরা হাতে পেয়েছি, সে নির্দেশনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার কথা বলা আছে। তাই বৃহস্পতিবার ক্লাস চলবে।
গতকাল বরিশালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে হাইস্কুল, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বৃহস্পতিবার খোলা থাকবে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মো. আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের সাড়া মেলেনি।
বরিশাল সদরের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বীথিকা সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বৃহস্পতিবার স্কুল বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা পাইনি। বরিশাল সদরের উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফয়সল জামিল জানান, প্রাইমারি স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি।
তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহের জেরে সরকারি সিদ্ধান্তে গতকাল বুধবার নওগাঁর সব হাইস্কুল-মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। গতকাল বুধবার ক্লাস চলেছে প্রাথমিকের। এদিন জেলার তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি বেড়ে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। একদিন ছুটির পর বৃহস্পতিবার জেলার প্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।