শুভ জম্মদিন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল

আমাদের বার্তা ডেস্ক |

নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর জন্মদিন আজ। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যলিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি ও বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চে ১৮ বছর কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন ও ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখেছন। তার লেখা কিছু উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

জাফর ইকবাল ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে পিতার কর্মস্থল সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম আগে ছিলো বাবুল। তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমদের পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। পিতা লেখালেখির চর্চা করতেন এবং পরিবারের এই সাহিত্যমনস্ক পরিবেশে জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। তিনি তার প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখেন সাত বছর বয়সে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এক নদীর ধারে তার পিতাকে গুলি করে হত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া জাফর ইকবালকে পিতার কবর খুঁড়ে তার মাকে স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারটি বিশ্বাস করাতে হয়েছিলো।

তিনি ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক পাস করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অর্জন করতে যান। তার বিষয় ছিলো ‘প্যারিটি ভায়োলেশন ইন হাইড্রোজেন অ্যাটম’ (হাইড্রোজেন পরমাণুতে সমতা লঙ্ঘন)। সেখানে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর ক্যালটেক থেকে তার ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন।

জাফর ইকবাল বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে গণিতকে জনপ্রিয় করতে ভূমিকা পালন করেন। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য রোটারি সিড পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার এনসিটিবির পাঠ্যবই ‘সহজ’ ও ‘শিক্ষার্থী বান্ধব’ করার উদ্যোগ নেয়। এর আওতায় ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির ১২টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়। এই ১২টির ৬টি বই জাফর ইকবাল এবং মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে পরিমার্জন করা হয়।

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকারের নতুন শিক্ষা নীতি আওতায় বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়। জাফর ইকবাল ৭ম শ্রেণির পাঠ্যবইসহ একাধিক নতুন পাঠ্যবইয়ের সহ-লেখক এবং প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তবে ‘বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ)’ পাঠ্যবইটি প্রকাশের পর চৌর্যবৃত্তি ও যান্ত্রিক অনুবাদের অভিযোগ উঠে। পরে জাফর ইকবাল বইটির জন্য তার ভুলের কথা স্বীকার করেন ও হাসিনা খানের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে জানান, ‘এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে।’

জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। তার প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী কপোট্রনিক ভালোবাসা সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিলো। গল্পটি পড়ে একজন পাঠক দাবি করেন সেটি বিদেশি গল্প থেকে চুরি করা। দাবিটিকে মিথ্যে প্রমাণ করতে তিনি গল্পটির চরিত্রগুলোকে নিয়ে আরো কিছু গল্প রচনা করেন এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এই গল্পগুলো নিয়ে কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইটি পড়ে শহীদ-জননী জাহানারা ইমাম প্রশংসা করেন। আমেরিকাতে বসেই তিনি বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রচনা করেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি নিয়মিত বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী লিখে যাচ্ছেন, প্রতি বইমেলাতে তার নতুন সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী প্রকাশিত হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00543212890625