শুরুতে ফেল, খাতা চ্যালেঞ্জ করে চমক দেখালেন জুলিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি |

বাক, শ্রবণ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী জুলিয়া আক্তার লিলি। এ বছর এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। পরীক্ষাও দিয়েছিল ভালো। কিন্তু ফলাফল এসেছিল জুলিয়া ফেল অর্থাৎ অকৃতকার্য। এতেই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে তিনদিন কান্নাকাটি করেছে মেয়েটি। আর রেজাল্ট চ্যালেঞ্জ করতেই চমকে গেছে পরিবার। কেননা জুলিয়া ফেল করেনি, জিপিএ-৫ পেয়েছে।

এই খবরে শুধু জুলিয়ার মুখে নয়, খুশির ঝিলিক বয়ে যাচ্ছে পুরো পরিবারে। এমনকি হাসিতে আর ইসারায় সবাইকে বোঝাচ্ছে আরো বেশি পড়ালেখা করবে, অনেক বড় হবে সে। 

জুলিয়া আক্তার (১৮) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামের প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলামের মেয়ে। শিখা আর শিলা নামে তার আরো দুইটি বোন রয়েছে, যাদের বিয়ে হয়েছে। ভাই রাতুল (১২) ৬ষ্ঠ শ্রেণী পড়ছে। 

জুলিয়া কারো বোঝা হতে চান না, তার ইচ্ছা চাকরি করবে। কিন্তু এই ইচ্ছায় বাধা হতে পারে বাবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলামের দারিদ্রতা। মাঠে ১০ শতক চাষযোগ্য জমি ছাড়া আর তেমন কিছু নেই। জমি আর অন্যের ক্ষেতে কাজ করে চলে নজরুলের সংসার।

এ দিকে জুলিয়ার পিতা নজরুল ইসলামও প্রতিবন্ধী। তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না আবার বুদ্ধিও স্বাভাবিকের তুলনায় কম। ১০ বছর বয়স হবার পর একটু একটু কথা বলতে পেরেছেন। এ জন্য স্কুলে যেতে পারেননি।

নিজে পড়ালেখা না জানলেও সব সময় চেয়েছেন ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা শিখুক। কিন্তু বড় দুইটি মেয়ে সেভাবে পড়ালেখা করেনি, তাই তাদের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে লিলি প্রতিবন্ধী। সে কথা বলতে, শুনতে ও বুদ্ধি করে চলতে পারে না। তার পরও পড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ। ছোট থেকেই ইসারায় বুঝিয়েছে সে পড়ালেখা করবে। বই পেলেই পড়তে বসে। মেয়ের এই ইচছাকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি পড়ালেখা করাচ্ছেন। 

গ্রামের স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করে জুলিয়া। এ বছর ভকেশনাল থেকে জুলিয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। নিজের মতো করে পড়ালেখা করতো, বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাসও করতো। সেখানেও শিক্ষকরা পড়া জানতে চাইলে ইশারায় উত্তর দিত। এভাবে পড়ালেখা করে এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে ফল প্রকাশের পর জানতে পারে রসায়ন বিষয়ে ফেল হয়েছে।

পরে খাতা খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করলে ২৬ ডিসেম্বর ফলাফল দেওয়া হয় সেখানে, জুলিয়া জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাংলা ছাড়া সবগুলো বিষয়ে তার জিপিএ-৫ রয়েছে।

জুলিয়ার মা সেলিনা বেগম জানান, এই ফল পেয়ে মেয়ে খুব আনন্দিত। সারাক্ষণ আনন্দ করে বেড়াচ্ছে। সে কলেজে ভর্তি হবে, অনেক পড়ালেখা করবে জানাচ্ছে। তার সখ ছিল মানবিক বিভাবে পড়ালেখা করে বড় চাকরি করবে, কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ায় শিক্ষকরা ভকেশনালে ভর্তি নিয়েছিল। 

মেয়েকে কলেজে ভর্তি করাতে ২-১ টি কলেজে যোগাযোগ করেছেন বাবা নজরুল। কিন্তু তারা জানিয়েছেন  ভর্তির কোটা শেষ। তাই তিনি চিন্তিত দূরের কলেজে মেয়েকে ভর্তি করালে পড়ালেখা করাতে পারবেন কি না। সেই সঙ্গে আর্থিক কষ্টও ভাবিয়ে তুলছে তাকে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026040077209473