রাজশাহীতে বিএনপির এক জনসভাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হুমকির ক্ষমার অযোগ্য, রাজনৈতিক গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষক সমিতির ব্যনারে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে, অনেক অর্থনীতিবীদ মনে করেন এটি সম্ভব না। কিন্তু বাংলাদেশ তা দেখিয়ে দিয়েছে। ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দেশ উন্নত দেশের কাতারে যাবে। সে কাজটি করার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প নেই। বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখের কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে অনেকে চান যে বাংলাদেশ তার কাঙিক্ষতত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। যার জন্য এ হুমকিগুলো আসে। নিজের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ছাড়া দেশের সকল মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দাঁড়াবে। আমরা আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক সমিতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই এ ধরনের হুমকি সামনের দিনগুলোতে প্রতিহত করবেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, যে রাজনৈতিক ব্যানারে দাঁড়িয়ে যে ব্যক্তিটি হুমকি দিয়েছে, সেই দলটিকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি মামলার কানাডার আদালত সেই রাজনৈতিক দলটিকে সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। লন্ডনে বসে যে দলটিকে পরিচালনা করছে, সে তারেক জিয়াকে বলা হয়েছে সে একজন সন্ত্রাসী টেরোরিস্ট হিসেবে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্টে যাদের জন্ম তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিশ্বাস করে না।
তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি একথা বলেছেন সেটি শুধু ওই ব্যক্তির একক কথা না, একটি রাজনৈতিক দলের ভাষা হল এটি। সুতরাং এই রাজনৈতিক দলটি নিয়েও চিন্তা করতে হবে। অতীতে হত্যা নৈরাজ্যের রাজনীতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। সেই রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সরকারের ভাবতে হবে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বলতে চাই এ ধরনের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার আছে কিনা সেটিও সরকার ভাবতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক। তাকে তাকে হত্যা করে যারা এ দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের ক্ষমা নেই আমরা এই প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। শেখ হাসিনা যেমন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তেমনিভাবে আগামীতে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যিনি হত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি ব্যক্তি নন, তিনি দলের প্রতিনিধি। তাকে অবিলম্বে রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে জানতে হবে কীভাবে সে এ ঘোষণা দিয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এমন ভাষায় যেমনিভাবে তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, সেটি নিন্দা জ্ঞাপন এর ভাষা আমাদের জানা নেই। যে যে ব্যক্তি তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ন্যক্কারজনক ভাষায় যে হুমকি দিয়েছে এটি কোনোভাবেই কোনো ভাষার মধ্যে পড়ে না। তাকে যেভাবে হত্যার হুমকি দিয়েছে সেটি একেবারে ক্ষমার অযোগ্য বিষয়। এটি নিম্ন পর্যায়ের কোনো ব্যক্তির বক্তব্য না। এটি এক ধরনের গভীর ষড়যন্ত্র, এই নীলনকশার শুরু করার একটি ইঙ্গিত।
ঢাবি উপাচার্য আরো বলেন, পেট্রোল বোমা এবং অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে নানা ধরনের সর্ব শ্রেণি-পেশার মানুষ কে হত্যার একটি নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং নানা ধরনের অপকর্ম সূচিত হয়েছিলো। যেটি আমরা অগ্নিসন্ত্রাস বলি, সেই অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয়েছিলো। এখন তারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। কৌশল পরিবর্তন করে তারা একটি নতুন মাত্রায়, ২০২৩ খ্রিষ্ঠাব্দে অগ্নি সন্ত্রাসের একটি নতুন ভার্সন হলো হত্যার হুমকি দেয়া। এবং হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করবে নানাভাবে সেটির একটি ইঙ্গিত সুস্পষ্টভাবে দেয়। এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার উদ্দেশে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করা হোক এবং এবং প্রদেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন খুবই জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ, অধ্যাপক ওহিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির, অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক আ.খ.ম জামালউদ্দিন, অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যকর পরিষদ ১৫টি পদের মধ্যে ১৪টিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সদস্যরা। শুধুমাত্র সহ-সভাপতি পদে আছেন বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান।