জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সংবিধানে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিতে বলেছেন আইন বিচার ও সংসদ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা আলোচনায় এ সব দাবি তোলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট।
সভায় বক্তব্য দেন- আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, কবি আবদুল হাই শিকদার, অ্যাক্টিভিস্ট জাহেদ উর রহমান এবং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী। লতিফুল ইসলাম শিবলী তাঁর বক্তব্যে সংবিধানে জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামকে স্বীকৃতি দানের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। পরে অন্যরাও এ বিষয়ে জোর দেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি নজরুল হচ্ছেন জাতীয় কবি। তবে কোথাও এটির ছাপ পাইনি। জাতীয় কবিকে যেভাবে চর্চা করতে হয়, উদযাপন করতে হয় সেটি কখনও দেখিনি। আমি সারাজীবনে সবরকম সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে প্রাধান্য দেখেছি রবীন্দ্র চর্চা। দোষ মন্দ বলছি না। শেখ হাসিনার সরকার একজনকে বানিয়েছে রাজনৈতিক ঈশ্বর, আরেকজনকে বানিয়েছে সাংস্কৃতিক জগতের ঈশ্বর। ঈশ্বরদের দাপটের কাছে নজরুলের মত গণমানুষের প্রতিনিধিদের তেমন তুলে ধরা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক সামাজিক জীবনে নজরুল অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। আমরা বারবার বিদ্রোহ করি। আমরা সব আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম, আমরা নিয়তির মত ধরে নিয়েছিলাম ২০৪২ নাকি ২০৮২। আমরা গুণতাম কত বয়স হলে একজন মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মাঝেমধ্যে দুঃখ করতাম, আমরা হয়ত আগেই মারা যাব উনি বেঁচে থাকবেন। ধীরে ধীরে বয়স কমছিল ওনার। এই সময়ে আমাদের তরুণরা মহান বিদ্রোহ করল।
আসিফ নজরুল বলেন, আমাকে নাহিদ-আসিফরা বলত মাঝেমাঝে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে আন্দোলন করছিল যারা তাদের সঙ্গে একটি পার্থক্য রয়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে আসতে পারেনি, কিন্তু এবার তারা সংকল্পবদ্ধ ছিল মরে গেলে মরে যাব রাজপথ ছাড়ব না। তারা বৃদ্ধদের মনে এই সাহস সঞ্চারিত করতে পেরেছিল। এরকম বিদ্রোহী জাতি, অপরাজেয় জাতির জন্য নজরুল সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। তাই নজরুল চর্চা বাড়াতে হবে, এটিকে আনন্দময়ী করে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, অনেকে আমাকে বলেন অমুক এটা করল কেন? জিনিসপত্রের দাম বাড়ল কেন? আমি আইনমন্ত্রী আমার দায়িত্ব সুবিচার নিশ্চিত করা। সেটা করতে পারি কিনা দেখেন। যতদিন বেঁচে আছি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হব না। যারা জুলাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অবশ্যই বাংলাদেশে তাদের বিচার হবে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, নজরুল সর্বরকম অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিক। জুলাই বিপ্লবেও দেয়ালে দেয়ালে তার নাম তাঁর প্রমাণ।
আমার দেশ পুনরায় চালু করতে গিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১১ বছর ধরে আমাদের শেখ হাসিনা ধ্বংস করে গেছে। তবে এখনও দ্রুত গতিতে চালানোর জন্য সহযোগিতা সরকার থেকে পাচ্ছি না। এখনও চালু করতে গিয়ে ব্যুরোক্রেসি আটকে রেখেছে। কোনো কোনো ব্যুরোক্রেট ভান করেছেন, তারা আমাদের করুণা করছে। অবশ্যই জুলাইয়ে মূল লড়াই করেছে তরুণ সমাজ। কিন্তু গত ১৬ বছর ধরে আমরা লড়াই করে গেছি, সেই লড়াইয়ের ফলেই তো শেখ হাসিনার পতন হয়েছে।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, বিপ্লবকে অর্থবহ করতে হলে ন্যারেটিভ বা বয়ান দাঁড় করাতে হবে। বয়ান বা লিটারেচার তৈরি করা গেলে ৭ নভেম্বর পরাজিত শক্তি বাংলা দখল করতে পারত না। বিপ্লবের ওপর এখনও কেন নাটক হয়নি? বাংলা একাডেমি গবেষণা কেন শুরু হয়নি? শিল্পকলায় নাটক সঙ্গীত কেন শুরু হয়নি? পত্রিকার কাটিং দিয়ে প্রামাণ্য বই বের করা হয়নি কেন? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলকে পড়ানো হয় না।
তিনি বলেন, দাদারা অখুশি হন বলে সংবিধানে নজরুলকে জাতীয় কবি করা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি কবি নজরুল ইনস্টিটিউটকে জাতীয় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট অথবা নজরুল ইনস্টিটিউট করার দাবি ব্যক্ত করেন।
জাহেদ উর রহমান, নজরুল মানে প্রতিবাদ করে রাখা। গত ১৫ বছরে নজরুলকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। যত স্বৈরাচার, নজরুল কম। তবে নজরুলকে সরিয়ে রাখা যায় না। সবার মধ্যে নজরুল ছিল, আবু সাইদের মধ্যেও দেখা গেছে। এবার নজরুলকে বিভিন্ন ফর্মে নিয়ে আসতে হবে।