সংশোধিত বৃত্তির ফল : কেউ পেলো, কেউ হারালো

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাজধানীর লালবাগের নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ছিল প্রায় আড়াই শ। তাদের মধ্য থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬০ জন শিক্ষার্থী। গত মঙ্গলবার প্রথম যখন ফল (ভুলের কারণে স্থগিত) প্রকাশ করা হয়, তখন দেখা যায়, বিদ্যালয়টি থেকে ৫ জন বৃত্তি পায়, সবাই মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) । একজন শিক্ষক জানালেন, এ নিয়ে তাদের মন খারাপ ছিল। 

তবে গতকাল বুধবার রাতে সংশোধিত আকারে ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, এ বিদ্যালয় থেকে মোট ১৭ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬ জন মেধা কোটায় বৃত্তি পেয়েছে। আর একজন পেয়েছে সাধারণ কোটায়। ওই শিক্ষক বললেন, এখন তারা খুশি।

রাজধানীর নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা খুশি হলেও উল্টো চিত্র রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়ে (এখানে প্রাথমিক স্তরে পড়ানো হয়)। আজ বেলা সোয়া ১১টার পর এ বিদ্যালয়ে গেলে একজন শিক্ষক জানালেন, স্থগিত করা ফলে তাঁদের বিদ্যালয় থেকে একজন ছাত্রী বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু গতকাল রাতে সংশোধিত ফলাফলে দেখা গেল বিদ্যালয় থেকে কেউ বৃত্তি পায়নি। মানে ওই ছাত্রীটি সংশোধিত তালিকায় নেই। এটি যেমন তাঁদের জন্য বিব্রতকর, তেমনি ওই শিশুর জন্যও মন খারাপের বিষয়। এমনটি কাম্য ছিল না।

শুধু এ দুটি বিদ্যালয়ই নয়, সংশোধিত ফলাফলে সারা দেশেই এ রকম পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হওয়ায় অনেক বিদ্যালয়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত সংখ্যা হেরফের হয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেকেই আগে বৃত্তি পেলেও সংশোধিত তালিকা থেকে বাদ গেছে। রাজধানীর বাইরে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বৈখেরহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে স্থগিত করা ফলাফলে একজনও বৃত্তি পায়নি, কিন্তু এখন সংশোধিত ফলাফলে বিদ্যালয়টি থেকে দুজন মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) এবং দুজন সাধারণ কোটায় বৃত্তি পেয়েছে। বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক এ তথ্য জানিয়েছেন।

অবশ্য অনেক জায়গায় আগে যে ফল ছিল, সংশোধিত তালিকাতেও একই আছে। যেমন নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জের সিরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে আজ জানালেন, তাঁদের বিদ্যালয় থেকে প্রথমেও সাতজন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল। সংশোধিত তালিকাতেও সাতজনই আছে।

গতকাল বুধবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফল প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই সঙ্গে আগের ফলে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে তারা।

তবে সংশোধিত তালিকায় সারা দেশে কতজন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে, তার প্রকৃত সংখ্যা জানাতে পারেননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা। তবে তাঁরা জানান, প্রথমত যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ভুলের কারণে বৃত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল তারা যেমন বাদ গেছে, তেমনি যারা বৃত্তি পাওয়ার কথা নয়, এমন অনেকের নাম সংশোধিত ফলাফলে বাদ গেছে। আবার নতুন করেও অনেকে বৃত্তি পেয়েছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। কিন্তু ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণ দেখিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় এ ফল স্থগিত করা হয়। এখন স্থগিত করা ফলাফল পুনর্যাচাই করে প্রকাশ করা হলো।

প্রাথমিক বৃত্তির মোট কোটা ৮২ হাজার ৫০০টি। অবশ্য ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) বৃত্তি পেয়েছে ৩৩ হাজার ও সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী। 

প্রাথমিক বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। এর মধ্যে মেধা কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাসে ২২৫ টাকা করে পাবে। এ ছাড়া বৃত্তি পাওয়া সব শিক্ষার্থী বছরে এককালীন ২২৫ টাকা করে পায়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রগুলো বলছে, ফলাফল তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কারিগরি দলের ভুলের কারণে মূলত এ ঘটনা ঘটেছে। ফলাফল তৈরির সময় একাধিক উপজেলার কোড (কম্পিউটারের কাজের একটি ব্যবস্থা) একই হওয়ায় সমস্যাটি হয়েছে। তাতে দেখা যায়, এমন ঘটনাও ঘটেছে, বৃত্তি পরীক্ষায় অংশই নেয়নি, এমন শিক্ষার্থীও বৃত্তি পেয়েছে।

এ ভুলের ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়। এখন সংশোধিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে অনেকের ফল পরিবর্তন হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024120807647705