সকালে মায়ের সঙ্গে বাসে থাকাকালে রবিউল জানতে পারলেন তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। বৃত্তি খবরে খুবই খুশী রবিউল। চিৎকার করে সবাইকে জানান দিয়েছিলেন সাফল্যের কথা। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই সে আনন্দ মাটি হয়ে যায়। বৃত্তি পরীক্ষার ফল স্থগিত হওয়ার খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রবিউল।
শুধু রবিউল নয়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা ছিলো এমনই। কারণ, সকালে প্রকাশিত বৃত্তি পরীক্ষার ফল বিকেলে স্থগিত করা হয়। বৃত্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাতে জানানো হয় আজ ১ মার্চ ফের সংশোধীত ফল প্রকাশ করা হবে। তাই, অনিশ্চয়তায় খুদে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
সন্ধ্যায় বৃত্তি পরীক্ষার ফল স্থগিতের খবর পাওয়া রবিউল মানিকগঞ্জের সিংগাইর ৯৭ নং জামিত্তা (১৫০০) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। স্থানীয় একটি হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রবিউল বলেন, এখন কি হবে?
রবিউলের মা শিক্ষিকা কানিজ ফাতেমা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বাচ্চা সকালে যখন বৃত্তি পাওয়ার খবর পায় তখন সে আমার সঙ্গে বাসে। খবর পেয়ে এমন চিৎকার দিয়েছে খুশিতে। আর এখন বাচ্চার কান্না থামানো যাচ্ছে না। এগুলো কি হচ্ছে? সকালে বাচ্চা বৃত্তি পেলো আর এখন বলা হচ্ছে ফল স্থগিত। সংশোধন করা হবে। এখন ওর কান্না থামাবে কে। ওর বাবা দেশের বাইরে থাকেন। দাদা মারা গেছেন। ছেলেকে নিয়ে আমি একা বাসায়। এগুলো কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
গতকাল সকালে ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তির জন্য নির্বাচিত করে ফল প্রকাশ করা হয়। তাদের মধ্যে ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার ও সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু বিকেল গড়াতেই সে ফল প্রকাশ না করতে সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
কুমিল্লার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান সন্ধ্যায় দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, কিছুক্ষণ আগে ডিজি অফিস থেকে পাঠানো ইমেইলে ফল প্রকাশ না করতে বলা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে সব প্রধান শিক্ষকদের জানাতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ফল প্রকাশ না করতে বলা হলেও স্থগিতের আগেই অনলাইনে ফল পেয়ে গিয়েছিলো শিক্ষার্থীরা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসগুলো থেকেই ফল স্কুলে-স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা ফল পাঠিয়ে দিয়েছিলাম সব স্কুলে। বাচ্চারা খুশি। অভিভাবকরাও। মিষ্টি বিলানো হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ কেনো ফল স্থগিত করা হলো বুঝতে পারছি না।
এদিকে ফল স্থগিত নিয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে চাচ্ছেন না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কর্তাদের সাড়া মেলেনি। একটি সূত্র বলছে, কোডিংয়ের ভুলের কারণে ফল স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার ফের ফল প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে সন্ধ্যায় একাধিকবার মুঠোফোনো যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিনের সঙ্গে বিকেল থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।