প্রখ্যাত সুরকার সত্য সাহার জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার ফতেয়াবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম প্রসন্নকুমার সাহা।
সত্য সাহার সংগীতে হাতেখড়ি হয় পিতৃব্য রবীন্দ্রপাল সাহার কাছে। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নারায়ণ হাই স্কুলে অধ্যয়নকালে তিনি পন্ডিত সুপর্ণা নন্দীর কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ভজন গানেও কিছু পারদর্শিতা অর্জন করেন।
সত্য সাহা বাংলাদেশ বেতারে সুরকার পঞ্চানন মিত্রের সহকারী হয়ে সংগীত পরিমন্ডলের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৮-১৯৫৯-তে সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তিনি বারোটি ছায়াছবির সংগীত পরিচালনা করেন। পরে তিনি বেতার শিল্পীর মর্যাদায় তালিকাভুক্ত হন। এ সময় ‘তোমার আমার’ ছায়াছবিতে তাকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দেখা গেলেও সংগীত পরিচালকরূপে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ ছায়াছবির মাধ্যমে। এ ছবিতে তার বিখ্যাত গান ছিল ‘তুমি আসবে বলে, ভালবাসবে বলে’। এ ছবির আগে সত্য সাহা তার জীবনের প্রথম ছবি ‘জানাজানি’র কাজ শুরু করেন, কিন্তু সুতরাং ছবির পরে জানাজানি মুক্তি পায়।
সত্য সাহার সংগীত পরিচালনায় অন্য যেসব ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে সৈয়দ শামসুল হকের ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’, রওনক চৌধুরীর ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’, সুভাষ দত্তের ‘কাগজের নৌকা’, সৈয়দ আওয়ালের ‘গুনাই বিবি’, ‘অপরিচিতা’, বশির হোসেনের ‘১৩ নম্বর ফেকু গোস্তাগার লেন’, আজিজুর রহমানের ‘সাইফুল মূলক্ বদিউজ্জামান’, সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ছবির নাম উল্লেখ করা যায়। এছাড়া রয়েছে ‘বাঁশরী’, ‘চেনা-অচেনা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘পরশমণি’, ‘মোমের আলো’ প্রভৃতি।
সত্য সাহার স্ত্রী রমলা সাহার প্রযোজনায় আশির দশকে নির্মিত বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘অশিক্ষিত’ ও ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবির কাহিনী, চিত্র, সংলাপ ও সঙ্গীত তৎকালীন বাঙালি সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
২০০ ছায়াছবির সংগীত পরিচালনা এবং বিশটি ছায়াছবি প্রযোজনা করে সত্য সাহা ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। পরিচালনায় তার কৃতিত্বের জন্য তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি ও ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।