কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগে হওয়া বিভাগীয় মামলা তদন্তে এবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. জহুরুল আলম চৌধুরী, উপ-সচিব মো. আব্দুস সালাম, সিনিয়র সহকারী সচিব সিরাজুহু ছালেকীনকে নিয়ে গঠিত এ কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আইসিটি শাখার সিস্টেম এনালিস্টসহ একাধিক ব্যক্তিরা ও চেয়ারম্যানের স্ত্রীর গ্রেফতার হয়েছিলেন। তার এই বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় গণমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে এ বিভাগের একাধিক কমিটি গঠন ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে মো. আলী আকবর খানের দাপ্তরিক অযোগ্যতা প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০১৮-এর উপধারা-১২(৬) অনুসারে এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বিধিমালা, ২০২২-এর উপবিধি-১৩(২) মোতাবেক সরকার কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে নিজ দায়িত্ব থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অব্যাহতি দেয়।
সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮-এর উপবিধি-৩ (ঘ) (অ) অনুসারে মো. আলী আকবর খানের ওপর নির্ভরশীল তার স্ত্রী বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানকে অবাধে জাল সনদ তৈরি করার বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য তার কাছ থেকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন এবং এই সুবিধা নেয়ার প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
মো. আলী আকবর খানের স্ত্রীর এই কার্যকলাপ অসদাচরণ এবং দুর্নীতিপরায়নের পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যা মো. আলী আকবর খানের ওপর বর্তায়।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী ২২ এপ্রিল বিভাগীয় কার্যধারা বা মামলা হয়।
বিভাগীয় মামলায় ১ম কারণ দর্শানো নোটিশ পর্যালোচনা ও ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণের পরের ধারাবাহিকতায় মামলাটি তদন্তের জন্য বোর্ড গঠন করা হলো। বিধিমালা অনুসরণ করে তদন্ত বোর্ড সম্ভব দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এর আগে সনদ-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেহেলা পারভীনকে গত এপ্রিলে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ১৪ মে ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে তিনি জামিন পান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দাবি, প্রাথমিকভাবে শেহেলা পারভীনের বিরুদ্ধে শামসুজ্জামানের সঙ্গে টাকাপয়সা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একই ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামান, সাবেক কর্মচারী ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের সনদ তৈরির নিজস্ব কারখানায় নিয়োজিত কম্পিউটারম্যান ফয়সাল হোসেন, গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার ওরফে কলি, হিলফুল ফুজুল নামের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সরদার গোলাম মোস্তফা ও যাত্রাবাড়ীর ঢাকা পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।