সব শ্রেণিতে বাংলা বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা চাই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পর্যন্ত পাঠ দানের সময় আলাদা রকমের বাংলা ভাষা ব্যবহার করেন। এতে আমরা সহজে বলে দিতে পারি তার জন্মস্থান কোথায় বা কোনো জেলায়। এই বলে দিতে পারা ব্যাপারটাও খুব খারাপ বিষয়টা তেমন নয়। কিন্তু আমরা জানি স্থান, কাল, পাত্রভেদে পোশাকের মতো ভাষায়ও রয়েছে আলাদা ব্যবহার। অফিস, খেলার মাঠ এবং বিছানায় আলাদা ধরনের পোশাক ব্যবহার না করলে আমরা যেমন স্বস্তি বোধ করি না তেমনি বাড়িতে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় এবং অফিসে আলাদা ভাষা ব্যবহার না করতে পারলে শুনতে ও বলতে স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়। শিক্ষকদের জন্মস্থান সম্পর্কে বলে দিতে পারার কারণ হলো, অধ্যাপক হওয়ার জন্য আমাদের কোথাও প্রমিত বাংলা উচ্চারণ বাধ্যতামূলক শেখার প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া দেশে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ শেখার যথাযথ কোনো প্রতিষ্ঠানও নেই। আর ব্যক্তিগতভাবে এই প্রমিত উচ্চারণ শেখা কাজটিও একদম সহজ নয়। ফলে ভাষার এই বেগতিক দুর্গতি রয়েই যায়। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়,  এই সমস্যা সমাধানে আমার একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। সেটি হলো, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ভাষার লিখিত রূপের পাশাপাশি বাচিক রূপের ব্যবহারিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং সেটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে কলেজ পর্যন্ত প্রতিটা শ্রেণিতে চলমান রাখা। আমাদের শুরু থেকে অর্থাৎ বর্ণমালা শেখা থেকেই এই প্রমিত উচ্চারণ শেখা আরম্ভ করা প্রয়োজন। কারণ আমাদের অনেক বর্ণ আছে, যা বর্ণ আলাদা হলেও উচ্চারণ প্রায় একই। যেমন- স-সব, শ-শব, ষ-ষাট। অন্যদিকে বর্ণ এক হলেও রয়েছে ক্ষেত্র বিশেষ আলাদা আলাদা উচ্চারণ। যেমন- এ-একটি, একটা, একাধিক, একাডেমি, ক-কলম, কবি, কথা। ফলে আমাদের সব লিখিত এবং উচ্চারিত শব্দ এক নয়। যেমন আত্মীয়, বিশ্বাস, ভস্ম, বিদ্বান।

তবে কি শুধু বাংলা ভাষাতেই এই সমস্যা রয়েছে? উত্তর হচ্ছে, না। সমস্যা সব ভাষাতেই রয়েছে। বরং আমাদের বাংলা ভাষাটি অন্য অনেক ভাষার থেকে গবেষণালব্ধ ও বৈজ্ঞানিক। একটু হেঁটে ইংরেজির দিকে গেলে দেখতে পাব ওয়াক, সাইকোলজি, ফিজিক্স, নিউমনিয়া, লেফটেন্যান্ট এমন অসংখ্য শব্দের লিখিত এবং উচ্চারিত শব্দ এক নয়। আমাদের আরো রয়েছে অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ বর্ণের উচ্চারণগত ত্রæটি। আঞ্চলিকতা মিশে গেছে আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, আরো আছে ভাষার প্রতি দরদের চরম অভাব। তাড়াহুড়ো করে উদাসীন অবহেলায় বাংলা বলে যাওয়ার মতো সমস্যা।

তাই এটি সমাধানকল্পে সব শিক্ষকের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক প্রথম থেকেই বর্ণমালা শেখানো অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই যদি বাসর রাতে বিড়াল মারার মতো করে বাংলা ব্যবহারিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা যায় তবে সমস্যা অনেকাংশে লাঘব করা সম্ভব।

এখন প্রশ্ন হতে পারে ব্যবহারিক পরীক্ষার বিষয়ে আমাদের ধারণা ঠিক কেমন? নিশ্চয়ই উত্তর আসবে, পদার্থ বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান এবং কৃষি শিক্ষা বিষয়ে আমরা ব্যবহারিক পরীক্ষায় যেভাবে নম্বর পেয়ে এসেছি তেমন। অর্থাৎ একদমই ইতিবাচক কিছু নয়। তার মানে পদ্ধতিটি ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তাহলে এর কি কোনো সহজ সমাধান নেই? নিশ্চয়ই আছে! আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সি) সহযোগিতা গ্রহণ করি তবে সমাধান সম্ভব। আমাদের প্রমিত বাংলার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে যেখানে ডিকশনারির মতো প্রমিত সব বাংলা শব্দের উচ্চারণ ভাণ্ডার থাকবে। ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় নির্ধারিত প্রশ্নের প্রমিত উত্তর শুনে তৈরিকৃত সফটওয়্যার যুক্ত একটি যন্ত্র ডেটা এনালাইসিস করে বলে দিতে পারবে কোন পরীক্ষার্থী কত নম্বর পাওয়ার যোগ্য। এবং ফলাফল পৌঁছে যাবে অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে। কোনো শিক্ষক চাইলেও কোনো শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর পরিমার্জন করতে পারবে না। আর যন্ত্রটির প্রাথমিকভাবে উৎপাদন মূল্য একটু বেশি হলেও বৃহৎ পরিসরে উদ্যোগ নিলে যন্ত্র প্রতি মূল্য সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এই উদ্যোগটি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন সম্ভব হলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে প্রমিত শব্দ উচ্চারণে অধিক যতœবান হবেন এবং আমরা পাব একটি শ্রæতিমধুর প্রমিত বাংলা উচ্চারণের দেশ।

লেখক : পবিত্র কুমার বিশ্বাস, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (ইলেক্ট্রনিক্স), ঝিনাইদহ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042409896850586