রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি খাতে নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য একজন ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। এটা তো বিকৃত রুচির লক্ষণ।
সোমবার (১৪ আগস্ট) আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের আগাম জামিনের আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।
গত পহেলা আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলায় মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়। যিনি ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন।
এই মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী। শুনানির শুরুতে একটি হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির হন অধ্যক্ষ।
এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, উনি কে? হুইল চেয়ারে কেন? জবাবে অধ্যক্ষের আইনজীবী রেদোয়ানুল করিম বলেন, উনি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ। পা ভেঙ্গে যাওয়ায় তিনি হুইল চেয়ারে এসেছেন।
আদালত বলেন, আমরা তো গণমাধ্যমে দেখেছি উনি ছাত্রীকে নিয়ে আসামির বাগান বাড়িতে প্লেজার ট্রিপে গিয়েছেন? এটা কিভাবে সম্ভব? রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান লিখন বলেন, পিকনিকে গিয়েছেন।
এ পর্যায়ে আইনজীবী রেদোয়ানুল করিম বলেন, আসামির সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। আদালত বলেন, এ তো বিকৃত রুচির লক্ষণ। আদালত বলেন, ওই ছাত্রী কোন ক্লাসে পড়ে? আইনজীবী বলেন, ইন্টারমিডিয়েটে। বয়স কত হয়েছে। আইনজীবী বলেন, ১৮ বছর ৬ মাস পূর্ণ হয়েছে। আদালত বলেন, ভিকটিম কোথায়? আইনজীবী বলেন, স্বামীর (খন্দকার মুশতাক) সঙ্গে আছে। তবে তাকে সাসপেন্ড করেছে।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি মামলার অভিযোগের অংশ বিশেষ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভিকটিমকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে আসামি ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। অর্থাৎ আসামি ওই ছাত্রীকে ব্লাকমেইল করেছেন। আর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, মেয়ের বয়স ১৮ বছরের উপরে। ব্লাকমেইলের প্রশ্ন আসছে কেন? যখন ভিকটিম সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে বলে আমি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি তখন কি মামলা থাকে? আমরা যদি ওই লাইভ না দেখতাম তাহলে বিষয়টি অন্যভাবে বিবেচনার সুযোগ ছিলো। এ যেন ‘প্রেমের মরা জলে ডোবে না’-এর মত অবস্থা।
হাইকোর্ট বলেন, এই স্কুলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি খাতে নেওয়া উচিত। শুনানি শেষে হাইকোর্ট অধ্যক্ষকে আগাম জামিন দেন। এ সময় অধ্যক্ষের পক্ষে আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।