দায় কার?সবার চোখের সামনেই বেড়ে ওঠা একজন হারুন

বোরহানুল হক সম্রাট |

গত শনিবার রাতে শাহবাগ থানায় যখন রমনার এডিসি হারুন-অর-রশীদের পিস্তলের বাটের আঘাতে ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার ৪ থেকে ৫টি দাত ভেঙ্গে ফেলা হয়, তার একদিন পর রাতের ঠিক তেমন একটা সময়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয় হল জীবনের এক বন্ধু ও এখন পুলিশের এক উদ্ধর্তন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনালাপ হচ্ছিল। ২৫ তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রবেশ করা ও বর্তমানে ঢাকার বাইরে থাকা বন্ধুটি বলছিলেন, ঢাকায় তার ২ সন্তান নিয়ে বাসকরা পরিবার আর আলাদাভাবে নিজের খরচ চালাতে তিনি হিমশিম খান প্রতি মাসের শেষের দিনগুলোতে। পুলিশের ইউনিফর্ম পরা আমার এমন আরো বন্ধু আছেন যারা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার খবরে সংসার নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে থাকেন।

বাস্তবতা কত করুণ যে, সদ্য বরখাস্ত এডিসি হারুনও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি যা করেছেন বলে পত্র পত্রিকায়, সামাজিক মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে তা শিউরে ওঠার মতো। আমার ধারণা স্পষ্টভাবে দেশ রাজনৈতিক বিভেদে জর্জরিত হবার সুযোগ নিয়েছেন হারুণ। না হলে তার ব্যক্তিগত একটি বিষয়ে পুলিশকে মাঠে ময়দানে ব্যবহারই শুধু নয়, থানার মধ্যে নিয়েও বক্তিগত ক্রোধ মিটিয়েছেন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি কী কী করেছেন তার তালিকা পত্রিকার পাতায় সয়লাব হয়ে আছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ি ছাত্রলীগের আহত নেতা আনোয়ার হোসেন বলছেন, থানার মধ্যে হারুনের নির্দেশে দেশের রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হককে মারধর করা হয়েছে। আরেক জায়গায় দেখলাম, বারডেম হাসপাতালের ৪র্থ তলায় আজিজুল হকের স্ত্রীর সামনেও আরেকদফা এমন লড়াই হয়েছে। সেই্ লড়াইয়ের পর এডিসি হারুন পুলিশকে থানা থেকে ডেকে আনেন। পত্রিকার খবর অনুযায়ি আজিজুল হককে এডিসি হারুন থানায় নিয়ে যান। কিন্তু কিভাবে নিয়ে যান সেই বর্ণনায় ভিন্নতা আছেন। কোথাও লেখা গাড়ীতে, কোথাও লেখা হারুন তাকে সদম্ভে ডেকে নেন। তারপর ওসি তদন্তের কক্ষে মারধর শুরু হয়।  

আমরা আসলে কোন বিষয়টাকে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে কুৎসিত বলে মনে করবো তা নিয়ে ভেবে স্তম্ভিত হয়ে যাই। শিক্ষকরা বলছেন, জাতীয়করণের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের ওপর এভাবেই হামলা করেছিলেন হারুন। সাংবাদিকরা বলছেন, হাইকোর্টে হামলার নায়ক ছিলেন তিনি। ইউটিউবে দেখা যায়, কীভাবে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের দিকে লাঠি নিয়ে হামলে পড়েন তিনি। ছাত্রদলের মিছিলে হামলা আর পেটানোটা ছিল হারুনের ওপরে ওঠার এক দারুণ কৌশল। ছাত্ররাজনীতির মলিনতার সুযোগ নিয়েছেন হারুন। যে ক্যাম্পাস থেকে এসেছিলেন সে, সেই ক্যাম্পাস তার মনে কোনো মর্যাদা তৈরি করতে পারেনি। আমরা কী এবার ভাববো, দেশের প্রাচীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, ২ টি আবাসিক হলের ২ জন শীর্ষ নেতাকে নির্মমভাবে পেটাতে হারুনের মনে কোনো সংশয় তৈরি হয়নি  কেনো।

নিউমার্কেট এলাকায় দোকান মালিক বিক্রেতা আর ঢাকার কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময়  শিক্ষার্থীদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়তে দেরি করায় এক কনস্টাবলকে থাপ্পড় মেরেছিলেন হারুন। একজন হারুনের আর কত অপরাধ জমা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ তৈরি হয় তা জানা নেই।  

একজন সহকর্মী বলছিলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর কর্মদিবস শেষ করেছিলেন ড. সা’দত হুসাইন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়ে তিনি ২৭তম বিসিএস বাতিল করেছিলেন। তা নিয়ে বিতর্কও উঠেছিলো। কিন্তু তিনি কঠোর ছিলেন নিয়োগের স্বচ্ছতায়। রক্ষা করেছিলেন পিএসসিকে। ফলে ২৮, ২৯ ও ৩০ তম বিসিএস তিনি পরিচালনা করেছিলেন শতভাগ পেশাগতভাবে। আলোচিত হারুনের নিয়োগ হয় ৩১ তম বিসিএসের মাধ্যমে। আমার বিশ্বাস শুধু পড়াশোনা করে উত্তীর্ণ ও পদায়ন হওয়া একটা মানুষ তার একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ভাইকে পিস্তলের বাট দিয়ে থেতলে থেতলে ৫ টি দাঁত ভেঙ্গে ফেলতে পারেন না। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া মেলাতে যেয়ে দেশের রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিবের গায়ে হাত তুলতে পারেন না। শিক্ষকের পিঠে চালাতে পারেন না শক্ত লাঠি, কলার ধরতে পারেন না-একজন সংবাদকর্মির।     

হারুন কেনো মনে যা আসে তাই করতে পারেন, সেটা কী শুধুই হারুনের অপরাধ? ১০ বছর ধরে এমন একজন হারুন তৈরি হয়েছে সবার সামনে। তাকে যদি সাবধান করা হতো তিনি কী নিজেকে আজ এই জায়গায় নিয়ে আসতেন। অবশেষে অনেক জল গড়ানোর পর সাময়িকভাবে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগের দুজন নেতার সঙ্গে যে নির্মমতার ঘটনা ঘটেছে তার প্রলেপ দেয়া হবে কীভাবে। 

অনেক ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে আমার কাছে সবচেয়ে করুণ ওই ছবিটিই যেখানে একজন সন্তান আনোয়ারকে পাশে নিয়ে বসে আছেন মা নাজমুন নাহার। সেই সন্তানের মা ডাকে যখন তার দিকে তাকাবেন স্নেহময়ী মা ততবারই তো তিনি আতকে উঠবেন। এই বীভৎসতাই কী সমাজের মুল ছবি হয়ে একজন মায়ের কাছে ধরা দেবে?  

আমার যে পুলিশ বন্ধুদের কথা শুরুতেই বলেছি, এই বাহিনীতে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন এ ঘটনায়- মুষড়ে পড়েছেন। সাংবাদিকতা নষ্ট হতে শুরু হবার সময় অনেক সহকর্মীকে দেখেছি অভিমানে এ পেশার পরিচয় দিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন। হারুনের অনাচার ঠিক সেভাবেই পুলিশের ইউনিফর্মকে আঘাত করেছে। এ আঘাতের দায় নেবে কে, কীভাবে।  

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই - dainik shiksha এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য - dainik shiksha ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান - dainik shiksha বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম - dainik shiksha উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের - dainik shiksha ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে - dainik shiksha ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00382399559021