সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে ১৭ শিক্ষকের বেতন বন্ধ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি |

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সভাপতি আমির শাহ প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, দুর্নীতির অপবাদে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষক, ৩ জন কর্মচারীর বেতন শিটে স্বাক্ষর না দিয়ে বেতন আটকে দিয়েছেন তিনি। অপরদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দানুসহ সকল শিক্ষক সভাপতির গড়িমসি, নিয়োগ বাণিজ্য, অসৌজন্যমূলক আচরণের দায়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সভাপতি ও শিক্ষকের দ্বন্দ্বে উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সরজমিন জানা গেছে, উপজেলার সর্ববৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৭শ’। শিক্ষক ১৭ জন। কর্মচারী ৩ জন। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। 

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগদান করেন শফিকুল ইসলাম দানু। অপরদিকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ২ বছর মেয়াদি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান আমির শাহ।

এর কিছুদিন পর থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে মনোমালিন্য দেখা দেয় তার। গত ৭ই জুন বেতন বিলে প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর করে সহকারী একজন শিক্ষককে সভাপতির নিকট বিল শিট দিয়ে পাঠালে স্বাক্ষর দিবেন না বলে সভাপতি জানিয়ে দেন। পরে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির জমিয়ে রাখা দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এদিকে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বেতন আটকে দেয়ার ফলে প্রধান শিক্ষকসহ ১৭ জন সহকারী শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী বেকায়দায় পড়েছেন। 

তারা বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। মে মাসের বেতনের সরকারি বিল দাখিল করার সর্বশেষ তারিখ ছিল ৮ই জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকরা ঈদের আগে বেতন উত্তোলন করতে পারবেন না ভেবে ভেঙে পড়েছেন।  বিদ্যালয়ের সভাপতি আমির শাহ বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ৬ তারিখ এসে এক তারিখের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। গত ২৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব ম্যানেজিং কমিটিকে জানাচ্ছেন না। লাইব্রেরির বই অন্যত্র সরিয়ে চুরির নাটক করা হচ্ছে। বছরের পর বছর বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি করছেন তিনি। আর এসব কারণেই শিক্ষকদের বেতন বিলে স্বাক্ষর দেননি তিনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম দানু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে সারা মাস পাঠদান করেছেন, এখন বেতন নিবেন এটাই স্বাভাবিক।

প্রতি মাসেই বেতনের সময় সভাপতি বিল শিটে স্বাক্ষর দিতে গড়িমসি করেন। এ মাসেও তিনি নানা অজুহাতে বিল সিটে স্বাক্ষর করছেন না। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন।  উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন শিটে সভাপতি স্বাক্ষর না করায় মাসিক বেতন বন্ধ রয়েছে শুনেছি। সভাপতি কোনো অনিয়ম করে থাকলে তিনি লিখিত আকারে জানাতে পারতেন। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করা তার ঠিক হয়নি। তাহিরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান রনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতার দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতার দাবি শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে ‘রাজাকার’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha ‘রাজাকার’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ উচ্চশিক্ষায় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ - dainik shiksha উচ্চশিক্ষায় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024549961090088