টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার দাপনাজোর গ্রামের মার্থা লিন্ডস্ট্রম নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
নরওয়ের কার্ল ফ্রেডরিক লিন্সড্রম ফাউন্ডেশন থেকে আসা ফান্ড, প্রতিদিনের মিড-ডে মিল, আফরোজা ডেইজি বৃত্তি, সরকারি অনুদান, বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে পাওয়া অনুদান, প্রতিবছর জেএসসি এবং এসএসসি সনদ, প্রশংসা পত্র এবং নম্বর পত্র বাবদ ফি-সহ নানা বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে।
অভিভাবকের অভিযোগে জানা যায়, দেশের বাইরে থেকে অনুদান এবং সরকারি অনুদান থাকলেও ছাত্রীদের জন্য তেমন কিছু আয়োজন থাকে না। গত কয়েক বছর ধরে কোনো ধরনের মিলাদ ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয় না। আগে দূরের ছাত্রীদের যাতায়াত খরচ দেয়া হতো বিদ্যালয় থেকে। কিন্তু এখন তা ছাত্রীরা পান না।
এই অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক বলেন, অভিযোগগুলো মিথ্যে নয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. আহসান হাবীব মনসুর (বাচ্চু) বলেন, নরওয়ে থেকে এখন ১০ হাজার ডলার আসে, আফরোজা ডেইজি বৃত্তির টাকা আসে। অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো থাকার কথা। কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগে আমিও হতাশ।
তিনি আরো বলেন, আমি মানসম্মত খাবার দিতে বলেছি, আগে জামানত রেখে সাইকেল দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা পরে ফ্রি দেয়ার কথা জানিয়েছি, যাতায়াত ভাতা চালু রাখতে বলাও হয়েছে।
আমার প্রশ্ন হলো, এতো বছরে অনুদানের পরিমাণ বেড়েছে অনেক কিন্তু ছাত্রীর সংখ্যা কমেছে কেনো? এতো বছরের অনুদানের টাকা কী করলেন? এখন আমি সব হিসাবের কথা জানতে চাওয়ায় সভাপতি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, যোগ করেন তিনি।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো. মানছুর রহমান বলেন, যাতায়াত ভাতা দেয়ার পরও শিক্ষার্থীরা হেঁটেই আসেন। তাহলে কেনো তাদের যাতায়াত ভাতা দিতে হবে?
এই বিষয়ে সভাপতি আবুল কালাম মোস্তফা লাবু বলেন, যাতায়াত ভাতা দিলেও শিক্ষার্থীরা হেঁটেই স্কুলে আসেন। তাহলে তাদের যাতায়াত ভাতা না দেয়াই যৌক্তিক বলে মনে করি।
বিভিন্ন ফান্ড বিষয়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক জানান, নরওয়ের কার্ল ফ্রেডরিক লিন্সড্রম ফাউন্ডেশন থেকে গত বছর ১০ হাজার ডলার, এ বছর সরকারের পাঁচ লাখ টাকা ও একটি প্রজেক্টের আড়াই লাখ টাকা এবং আফরোজা ডেইজি বৃত্তির পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।
ফান্ডের অবস্থা ভালো থাকা সত্ত্বেও কেনো ডাল ও আলু ভর্তা দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করছেন উত্তরে সভাপতি বলেন, ভাত, ডাল ও আলু ভর্তা অনেক উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। এ ছাড়া খরচের পর আগের বছরের অনুদানের টাকা পরের বছর একত্রিত হিসাব করা হয়।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। বিদ্যালয়ে অভিভাবক ভোটার সংখ্যা ১১৩। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ১১৩ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রীর বাবা বিদেশে থাকেন। সেইক্ষেত্রে ছাত্রীর মা হবেন ভোটার। সংশোধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র স্কুলে জমা দিলেও তা সংশোধন হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, এইটা আমার দায়িত্ব না। ক্লাসে নোটিশ দেয়া হয়েছে। বাকিটা তাদের বিষয়। খসড়া তালিকা তৈরি করার দায়িত্ব আমার।
এ বিষয়ে এই নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার বাসাইল উপজেলা শিক্ষা অফিসার মতিউর রহমান খান বলেন, এতো অল্প ভোটার সংখ্যা। সংশোধনের বিষয়ে অবশ্যই নজর দেয়া উচিত ছিলো।
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করায় এক পর্যায়ে বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম মোস্তফা লাবু নির্বাচনের আগে নিউজ করতে নিষেধ করেন।