এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশের (এমপিও) চেক ছাড় হয়েছে গত মঙ্গলবার। তবে শিক্ষকরা কবে নাগাদ এই বেতন তুলতে পারবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ সবাইকে ফেলে দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তায়। কারণ, বেসরকারি প্রায় সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ বাগিয়ে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকে তারাও লাপাত্তা।
কিন্তু, এমপিওর ছাড় হওয়া বেতন তুলতে সভাপতির স্বাক্ষরসহ বিল ব্যাংকে জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। এই নিয়মই চরম অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। ইউএনওদের স্বাক্ষরে বিল হলেও অফিসে তাদের অধিকাংশ এখনো অনিয়মিত।
জানা গেছে, প্রতিমাসে তিন অধিদপ্তরের মোট ৩২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন-ভাতার সরকারি অংশ হিসেবে ১১শ’
বিষয়টি নিয়ে দেশের নানা প্রান্তের অন্তত অর্ধশত এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছে দৈনিক আমাদের বার্তা। তারা জানিয়েছেন, সইয়ের জন্য সভাপতিকে ফোন করে ও বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বেশির ভাগই পলাতক। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা উৎকণ্ঠিত সময় পার করছেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জাফরনগর অপর্ণা চরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ট্রেড ইনসট্রাক্টর আকতারুজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বেতন বিলে সভাপতির স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এখন দেশের এই অবস্থায় বেশির ভাগ স্কুল-কলেজের সভাপতি লাপাত্তা। তাহলে বেতন বিলে কে স্বাক্ষর করবেন?
রাজধানীর তেজগাঁও আর্দশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. আব্দুল মান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সভাপতি পলাতক রয়েছেন। তার সই ছাড়া বেতন তোলা যাচ্ছে না, এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। সব শিক্ষককের মধ্যেই এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আ. জব্বার হাওলাদার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সই করিয়ে নিয়ে আসবো। তবে বেশির ভাগ স্কুল–কলেজের শিক্ষকদের বেতন তুলতে ভোগান্তি হচ্ছে। জানা গেছে, ঢাকার জেলা প্রশাসকই অফিসে অনুপস্থিত। ফোনও বন্ধ।
ঝালকাঠির তেরআনা শাহমাহমুদিয়া আলিম মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শাহাদাত হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমাদের সভাপতি সৈয়দা আরজুমান বানু নারগিস। তিনি সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের স্ত্রী। তিনি এখন কোথায় আছেন জানি না, তবে আমাদের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার যে নির্দেশনা দেবেন আমরা সেভাবেই বিল তুলবো।
ঝালকাঠি শহরের উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.বি.এম আনিসুর রহমান পলাশ বলেন, সভাপতি অনুপস্থিত, তিনি যদি সময়মতো না আসতে পারেন তাহলে আমাদের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে বেতন তুলতে পারবো।
প্রসঙ্গত, প্রতিমাসে এমপিওর চেক ছাড়ের খবরের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতে হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের। চেক ছাড় হলে বেতন বিল তৈরি করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সইয়ের জন্য টাকা দিতে হয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে। অনেক ভোগান্তির পরে হাতে পাওয়া যায় এমপিও নামে পরিচিত বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা। এ ভোগান্তি চলছে চার দশকের বেশি সময় ধরে। এবার সীমাহীন এ ভোগান্তির সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।
তবে আশার কথা হলো, এই ভোগান্তির অবসানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উদ্যোগ সফল হলে শিক্ষকেরা বেতন পাবেন আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারের ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি)।
প্রতিমাসের ১ তারিখে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে বেতনের টাকা। ভোগান্তি পোহাতে হবে না সাড়ে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে। বেতনের টাকাই শুধু নয়, অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকাও এই ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে দেয়া হবে। যার ফলে ভোগান্তি শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি নৃপেন চন্দ্র দাস দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই নিয়মে ছাড় দেয়া উচিত।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, করোনা মহামারির সময় এটি ছাড় দেয়া হয়েছিলো, তেমনি এখনো এটা করা উচিত।
এই মুর্হূতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বাক্ষরে বেতন তোলার নির্দেশনা দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, অধিদপ্তরগুলো থেকে দ্রুত সময়ে এ বিষয়ে সমাধানে একটা নির্দেশনা দেয়া দরকার।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।