ঢাকার সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে একটি চক্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি, অসদাচরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এরপর ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
গ্রেফতার যুবকের নাম মো. আজিজ (২৭)। তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের মধুপুর তালটেকী এলাকার মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে। তিনি বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের একজন সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে।
স্থানীয় শ্রীপুর এলাকার ব্যবসায়ী মানিক মিয়া গতকাল রোববার আশুলিয়া থানায় বাদী হয়ে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত শনিবার দিবাগত রাতে আজিজ ও তার সঙ্গী জাহাঙ্গীরসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে শ্রীপুর বৃহত্তর পাইকারি কাঁচা বাজারে ভুক্তভোগী মানিক মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। এসময় তারা নিজেদের সাভার-আশুলিয়া এলাকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসায় অবৈধ অস্ত্র ও গুলি আছে জানিয়ে তল্লাশি করতে চান। এসময় নেতৃত্বদানকারী আজিজ ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করেন। পরে তারা ভুক্তভোগীর বাসায় তল্লাশি করে কোনো কিছু না পেয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং চার দিনের সময় বেঁধে দেন। ওই সময়ে টাকা প্রদান না করলে ভুক্তভোগীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় আসামি করা হবে বলে হুমকি দেন।
এদিকে সমন্বয়ক পরিচয়ে ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজির খবর শুনে গত শনিবার রাতেই অভিযুক্ত আজিজকে ডেকে নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণ হলে আজিজকে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগীর কাছে এর আগেও প্রতারক আজিজের সহযোগী জাহাঙ্গীর খান হত্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় জাহাঙ্গীরকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেছিলেন ভুক্তভোগী।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী মানিক মিয়া বলেন, ‘আমাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য আজিজ নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে হুমকি দিয়েছে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে ডাকা হলে তার প্রতারণার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের সামনে প্রমাণিত হয়। পরে তাকে মারধর করে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।’
প্রতারক আজিজের এলাকাবাসী জানান, গত জাতীয় নির্বাচনেও সে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয়কর্মী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ জংয়ের ঈগল মার্কার পোস্টার লাগানোর কাজ করেছেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামের লোকজন তাকে মারধর করেন। গণমাধ্যমেও বিষয়টি প্রচারিত হয়। হঠাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরপর মর্মান্তিক ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনার সুযোগ নিয়ে থানায় যাওয়া শুরু করে আজিজ। এরপর নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এলাকার বেশ কিছু মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রতারণার অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আজিজ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’