সমরেশ বসু’র আজ মৃ*ত্যুবার্ষিকী

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক সমরেশ বসু’র আজ মৃত্যুবার্ষিকী। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু; কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূট ও ভ্রমর ছদ্মনামে উল্লেখযযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন।

কথাসাহিত্যিক সমরেশ বসু ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার রাজনগর গ্রামে পৈতৃক বাস্তুভিটায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মোহিনী মোহন বসু। মায়ের নাম শৈবালিনী বসু। সমরেশ বসুর জন্মের সময় বাবার এক মাসিমা সদ্যোজাত সমরেশকে দেখতে এসে বলেছিলেন, ‘এ যে তড়বড় কইরা আইয়া পড়লো’। 

তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে ভারতের কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বাবার নাম মোহিনীমোহন বসু, মা শৈবালিনী বসু। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। তিনি একসময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন।

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইছাপুর বন্দুক কারখানায় চাকরি করেছেন সমরেশ বসু। এই সময়পর্বের মধ্যেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে ১৯৪৯-৫০ খ্রিষ্টাব্দে জেলও খাটতে হয়। জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

কালকূট মানে তীব্র বিষ। এটি ছিলো তার ছদ্মনাম। ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’, ‘কোথায় পাব তারে’ সহ অনেক উপন্যাস তিনি এ নামে লিখেছেন। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে বেড়াতে ঘুরে বেরিয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধর্মী উপন্যাস। হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিলো, সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে তিনি অমৃতের সন্ধান করেছেন। তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে৷ অমৃত বিষের পাত্রে, মন মেরামতের আশায়, হারায়ে সেই মানুষে, তুষার শৃঙ্গের পদতলে ইত্যাদি এই ধারার উপন্যাস। 

লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। ‘চিরসখা’ নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোল ও গোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি ১৯৫৯ ও ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।

তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে আমৃত্যু ক্রিয়াশীল ক্ষণজন্মা লেখক সমরেশ বসু ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালেও তার লেখার টেবিলে ছিলো দশ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে উপন্যাস ‘দেখি নাই ফিরে’।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
বর্তমানে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha বর্তমানে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী শিক্ষাখাতের নতুন তদবিরবাজ তিতাস! - dainik shiksha শিক্ষাখাতের নতুন তদবিরবাজ তিতাস! শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে: সমন্বয়ক হান্নান - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে: সমন্বয়ক হান্নান তদন্ত রিপোর্ট না দিয়েই সটকে পড়ছেন শিক্ষা পরিদর্শকরা - dainik shiksha তদন্ত রিপোর্ট না দিয়েই সটকে পড়ছেন শিক্ষা পরিদর্শকরা বরখাস্ত হচ্ছেন শিক্ষা বোর্ডের সেই সচিব নারায়ণ নাথ - dainik shiksha বরখাস্ত হচ্ছেন শিক্ষা বোর্ডের সেই সচিব নারায়ণ নাথ আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024750232696533