সমসাময়িক রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও সমন্বয়ক

মো. আজহারুল ইসলাম, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

আজকে যারা জাতীয় রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, একসময় তারা ছিলেন ছাত্ররাজনীতির পুরোধা। রাজনৈতিক নীতি আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের মেধা প্রজ্ঞা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জনমত গড়ে তোলা ও দলের অনুসারী কর্মী নেতা বানাতেই ব্যস্ত থাকতেন বা আছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি দলের প্রচার কাজই ছিলো তাদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য । ষাট, সত্তর আশি অথবা নব্বই দশকের ছাত্ররাজনীতির কিন্তু একটা বড় ঐতিহ্য আছে। তখন বাপের টাকা খরচ করে তারা রাজনীতি করতেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদের নেশায় তারা রাজনীতি করতেন না বা এখনো করেন না বলেই মনে হয়।

কিন্তু দেশের জনগণের ভালো থাকা, জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতেন এবং এখনো করছেন। সেই সব জাতীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দের অধিকাংশই এখন জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

তবে সেক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকেই তাদের দলের নীতি আদর্শ দর্শনকে পুঁজি করে জনমত গঠনে কৃতকার্য হয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন অথবা এরকম রাজনৈতিক দলও আছে, যেসব দলের নীতি, আদর্শ, দর্শন প্রচার প্রসারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সরকার গঠন করবেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হবেন। কতটুকু সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে দেশ চালাবেন তা ভিন্ন কথা। আমাদের এই বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল নেতৃত্বে ছিলেন কিন্তু ছাত্ররাই।

তাদের রাজনৈতিক ভাবধারায় পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ সংগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে। জৈবিক চাহিদাও বিসর্জন দিতে হয়েছে অনেককেই। যৌবনের স্বাদ পাওয়ার আগেই শহীদ হতে হয়েছে লাখ লাখ ছাত্রনেতা, কর্মী, অনুসারীকে। ৫২, ৬২, ৬৯, ৭১, ৯০ এবং ২৪ একই সুত্রে গাঁথা। ইতিহাস হয়তো বলে দেবে এই বছরগুলোর তাৎপর্য। সেক্ষেত্রে ৭১ যে মাদারবোর্ড তা স্বয়ং ড. ইউনূস স্বীকার করেছেন এবং ৭১ পূর্বর্বর্তী সময়গুলো মাদারবোর্ডের বিভিন্ন সংযোগ বলা যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়গুলো ছিলো রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম আন্দোলনের। এবং সেক্ষেত্রে ছাত্ররাই অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী তবে তা রাজনৈতিক নীতি আদর্শ সামনে রেখেই পরিচালিত হয়েছে যা এখনো চলমান।  

পক্ষান্তরে আজকে যারা সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই-আগষ্ট/২৪ এর নেতৃত্বদানকারী, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পেরেছিলেন। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছিলেন আন্দোলনের নেতা হিসেবে। তাদের রাজনৈতিক আদর্শ কী তা না জেনে, না ভেবে  ছাত্র জনতা শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা সরকারকে পতন ঘটানোর জন্যই কালবিলম্ব না করে তাদের নেতৃত্বেই স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করেই ঘরে ফিরেছিলেন। লক্ষ্য ছিলো দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে নতুন বাংলাদেশে রূপ দেয়া।

যেখানে থাকবে না কোনো অবৈধ নির্বাচন, দুর্নীতি, বৈষম্য, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের ফলে সেই ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছে কিন্তু তার দোসররা এখনো রয়ে গেছে।

যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় ওঁৎ পেতে আছে, যেকোনো রকম গোলযোগ সৃষ্টি করার সুযোগের অপেক্ষায়।

আশার কথা এত কিছুর পরেও এক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ এগিয়ে চলছে ঠিকই তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে যতটা দক্ষ অভিজ্ঞ জনগণ মনে করেছিলো ততোটা কিন্তু তাদের মধ্যে অনুপস্থিত বলেই প্রতীয়মান।

রাজনৈতিক দক্ষতার অভাব থাকা সত্ত্বেও যখন নিজেকে কেউ অতি বেশি দক্ষ মনে করে তখন জনগণের চেয়ে দেখার ছাড়া আর কিই বা করার আছে। দেখা গেলো সমন্বয়কদের কয়েকজন সরকারে আর বাকীরা সরকারের বাইরে অথবা প্রেসার গ্রুপে এবং এই প্রেসার গ্রুপ নামটাও কিন্তু সমন্বয়কদের মুখ থেকে আসা।

মজার ব্যাপার হলো, যারা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে বসলো শুরুতেই, তাদের রাজনৈতিক নীতি জনগণের আর জানা হলো না বা তা এখন জানার অবকাশ নেই বরং তারা থেকে যাক ইতিহাসের পাতায় সমন্বয়ক হিসেবে। তবে ছাত্ররাজনীতির নেতা ও দলীয় রাজনীতিবিদ হিসেবে তারা নিজেদের  উপস্থাপন করতে চাইলেও সেই সূযোগটা হয়তো তাদের আর আছে কিনা তা কারোর ভাববার থাকলে ভাবতে পারেন। সেক্ষেত্রে ছাত্ররাজনীতি, রাজনীতিবিদ এবং সমন্বয়ক এই তিন এর একটা বড় সমীকরণ মেলানো কঠিন। তাই দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সমন্বয়ক ও রাজনীতিবিদ তফাতটা থেকে যাবে। আজ, আগামীকাল অথবা যতদিন জনগণ মনে রাখতে চায়।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026960372924805