বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও চাকরি প্রত্যাশী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদ অনলাইনে সত্যায়নে অ্যাপোস্টিল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ।
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সনদ অনলাইনে সত্যায়ন শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বুধবার ইউজিসি অডিটোরিয়ামে অনু্ষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউজিসি’র সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার ও ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম।
ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন এবং ট্রেনিং বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ শাখার মহাপরিচালক ড. শাহ্ মোহাম্মদ তানভির মনসুর।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ফায়েজ বলেন, অ্যাপোস্টিল পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট সত্যায়ন করা হলে শিক্ষার্থীদের সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হবে এবং তাদের ভোগান্তি কমবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিমাসে দুই লাখ সার্টিফিকেট সত্যায়ন করতে হয়। অ্যাপোস্টিল পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট সত্যায়ন নিশ্চিত করা গেলে তাদের কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে বলে মন্তব্য করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।
তিনি আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের প্রত্যাশা পূরণ ও দেশ সুন্দরভাবে গড়তে ইউজিসি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঐক্যবদ্ধভাবে হয়ে কাজ করবে।
প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউজিসিকে ঢেলে সাজানো না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজ ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে তিনি আশঙ্ক্ষা করেন। এই প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর নির্ভর করছে আমরা কতোটা গতিশীলভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমাদের কার্যক্রম দিয়ে সহায়তা করতে পারছি এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারবো সেটাই চ্যালেঞ্জ।
তিনি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন এবং ইউজিসি’র প্রতি জাতির প্রত্যাশা পূরণে সংশ্লিষ্টদের অ্যাপোস্টিল পদ্ধতিতে সনদ সত্যায়ন যথাযথভাবে সম্পাদনের আহ্বান জানান।
এদিকে অনুষ্ঠান শেষে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউজিসির বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপের অগ্রগতি দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটা কমিটি করা হয়েছে, এই কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা সম্প্রতি যেটা করেছি, সেটা হলো, নতুন করে একজনকে যোগ করেছি। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটি প্রতিবেতদন জমা দেবে। অর্থাৎ ১৩ তারিখের মধ্যে আমরা প্রতিবেদন পেয়ে যাবো।
যে যেখানে বঞ্চিত হয়েছে তাকে সেখানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো আমরা। আর্থিক সুবিধাটা হয়তো ওনারাও চান না। তবে যখন থেকে এটা ইফেক্টিভ হবে তখন থেকে এটা হতে পারে। তারা অলরেডি মোস্ট অব দ্য সিনিয়রিটি। তারা একটা স্কেলে পৌঁছে গেছেন।
ইউজিসি সদস্য প্র্রেফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আগের সরকারের সময়ে ইউজিসিতে যে প্রশাসন ছিলো তা সরিয়ে অনেক জায়গায় ঢেলে সাজানো হয়েছে। কিন্তু ইউজিসিতে তা করা হয়নি। যার ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে একটা হুমকির মুখে পড়তে পারে ইউজিসি। তাই ইউজিসিকে ঢেলে সাজাতে হবে।
যারা বঞ্চিত তাদেরকে মেইনস্ট্রিমে আনা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে, কমিটির কাজ শেষ হলে ইউজিসি সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
এদিকে অনুষ্ঠানে কমিশনের গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. সুলতান মাহমুদ ভূঁইয়া, জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া, জেনারেল সার্ভিসেস, এস্টেট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিচালক জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং, কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগের পরিচালক ড. দুর্গা রানী সরকার, অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মো. রেজাউল করিম হাওলাদারসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এটুআই, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও আইটি কর্মকর্তা এবং ইউজিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট সত্যায়নে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘অ্যাপোস্টিলমাইগভ’ (Apostill myGov) প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
অ্যাপোস্টিল কনভেনশনের আওতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এটুআই এবং ইউজিসি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেয়া বিদেশ যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট অ্যাপোস্টিলমাইগভ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সত্যায়ন সম্পন্ন করবেন। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ চূড়ান্ত করা হবে।
এই প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীরা আবেদন ফি জমা দিয়ে সহজে সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সনদের তথ্য যাচাই করে ইউজিসি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সত্যায়নের জন্য পাঠাবে। সার্টিফিকেট ডিজিটাল সত্যায়নে কিউআর কোড যুক্ত থাকবে। সার্টিফিকেট সত্যায়নে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে আসবে, ব্যয় সাশ্রয়ী হবে এবং বিদেশের দূতাবাসসহ নানা দপ্তরে সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না।