টিফিন ইংরেজি শব্দ। যার অর্থ হল হালকা খাবার বা সামান্য পানীয়। বিশেষ করে প্রাতঃরাশকালীন খাওয়া হয়। ভারতের কিছু অংশে বা ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু অঞ্চলে মধ্যহ্নভোজ বা খাবারের মধ্যবর্তী সময়ের স্ন্যাককেও বুঝায়।
ব্রিটিশ রাজ্যে বিকেলের চা খাওয়ার ব্রিটিশ রীতি বুঝাতে টিফিন শব্দটা ব্যবহার করা হতো। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এটি উত্তর ব্রিটিশ ভারতের অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের মধ্যে মধ্যাহ্ন ভোজ বলা হতো।
টিফিনের বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় উপাহার। অর্থাৎ আহারের আগে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আহারের আগে সাধারণত এক গ্লাস পানি দেয়া হয়।
মানের দিক থেকেও তা বেমানান নয়। কারণ, পানির অপর নাম জীবন। শুধু মানুষ নয়, পানি ছাড়া কোনো প্রাণীই বেশি দিন বাঁচতে পারে না। তবে পানি যেমন জীবন বাঁচায় তেমনই পানি আবার হতে পারে বড় বিপদের কারণ যদি পরিমাণে বেশি পান করা হয়।
সেইদিক বিবেচনা করেই হয়তো। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ১১ নং থেকে ২০ নং গ্রেডের কর্মচারীরা প্রতি মাসে ২০০ টাকা হারে টিফিন ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে যেসব কর্মচারী তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে টিফিন বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এই ভাতা প্রযোজ্য হয় না।
দৈনিক হিসেবে এই ভাতা ৬ দশমিক ৬৭ টাকা। গাণিতিক হিসেবে একটু বেশি হয়ে যায়। টিফিন উপাহার অর্থে যা বুঝায় সেই দিক থেকে তা সম্মান জনকই। কারণ, এক গ্লাস পানির বাজার মূল্য এ রকমই বটে। ফলে দেরিতে হলেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর পরিকল্পনাককারীদের প্রতি। তারা টিফিনের মতো সাস্থ্য-সম্মত একটি বিষয়ে এতো সূক্ষ্ম হিসাব করে ১১ নং থেকে ২০ নং স্কেলের কর্মচারীদের উপহার দেয়ার জন্য।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে সংস্কার। দেশের সব ক্ষেত্রেই সংস্কার চায় মানুষ। যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাই বাংলাদেশকে নতুন করে সাজাতে চাচ্ছে। অবকাঠামোগত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কার হলেও দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার মানসিক সংস্কার।
আমরা অনেক সময় নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকি। কিন্তু নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে থাকি উদাসীন। সংস্কারের মাধ্যমে দায়িত্ববান নাগরিকরা সেবা গ্রহীতারদের প্রতি উদাসীনতার ফলে পরবর্তী পে-স্কেলে ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য আবারও যদি দুই শত টাকা টিফিন ভাতা বরাদ্দ থাকে সেটা হবে চরম মানসিক সংস্কারহীনতার বহিঃপ্রকাশ।
বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান থাকবে আহার্যের মতো একটি বিষয়ে সম্মানজনক বরাদ্দ দিয়ে সম্মানিত করবেন অন্যথ্যায় অসম্মানের দায়টা না নেয়াই শ্রেয় মনে করি।
লেখক: শিক্ষক ও কলাম লেখক