সরকারি কলেজে অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা আদায়, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি |

বরগুনার আমতলী সরকারি কলেজে অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কোন পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও তা না মেনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সোমবার (২৩ নভেম্বর) কলেজের প্রধান ফটকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও তোপের মুখে কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ মজিবুর রহমান পরীক্ষা স্থাগিত করেছেন।

জানা গেছে, আমতলী সরকারি কলেজে একাদশ, দ্বাদশ ও স্নাতক শ্রেণিতে দুই হাজার সাত’শ শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনা ভাইরাস থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বন্ধ হয়নি আমতলী সরকারি কলেজের পরীক্ষার নামে টাকা আদায়। গত ১৫ অক্টোবর অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার নামে কলেজ অধ্যক্ষ পরীক্ষা শুরু করেন। ওই পরীক্ষা গত ২৮ অক্টোবর শেষ হয়। ওই সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার দুই’শ ষাট টাকা আদায় করেন। 

অভিযোগ আছে ওই সময়ে কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলেও কলেজ অধ্যক্ষ তাদের অপরগতা আমলে নেয়নি। উল্টো পরীক্ষায় ফি না দিলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের চাহিদা মত টাকা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ওই পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক মাসের মাথায় আবারও আগামী ২৯ নভেম্বর অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। এ পরীক্ষায় ফি, বেতনসহ বিভিন্ন ফি বাবদ এক হাজার দুই’শ ষাট টাকা ধার্য্য করেন। ওই টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে রোববার কলেজ অধ্যক্ষের সাথে শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে ওইদিনই শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। 

সোমবার কলেজের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার নামে টাকা আদায় বন্ধের দাবিতে কলেজের প্রধান ফটকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভের তোপের মুখে পড়ে অধ্যক্ষ পরীক্ষা স্থাগিত করে তার অফিস কক্ষ ত্যাগ করেন। 

এদিকে কলেজ অধ্যক্ষের এমন কার্যক্রমের কথা ছড়িয়ে পড়লে আমতলীতে নিন্দার ঝড় উঠে। দ্রুত বিষয়টি বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মাদ ইউনুসের নজরে আসে। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। অভিযোগ রয়েছে, কলেজ অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান সরকারি নিয়মনীতি মানছে না। তিনি সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। 

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা আদায় করতে পারবে না। টাকা আদায় করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু মন্ত্রনালয়ের এ পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাচ্ছেন অধ্যক্ষ। তিনি উল্টো ওই পরিপত্রের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করছেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাসেল, জুবায়ের ও মেহেদীর। 

মানববন্ধন কলেজ শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন, কাজী অপসরি, শরীয়াতুল্লাহ, মেহেদী হাসান ও জোহান ইমন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার নামে আমাদের কাছ থেকে এক হাজার দুই’শ ষাট টাকা আদায় করছে। যেখানে পরীক্ষার ফি মাত্র দুই’শ ৮০ টাকা। তারা আরও বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে সারা বিশ্ব টালমাটাল কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষের কাছে তা তেমন ব্যাপার না। তিনি তার ইচ্ছা মাফিক আইন করে কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ঘটনা তদন্ত করে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ মোঃ মজিবুর রহমান ইতোমধ্যে অন্তত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার নামে এক হাজার দুই’শ ষাট টাকা করে কয়েক লাখা টাকা তুলেছেন।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমতলী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মজিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরীক্ষা আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফি ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ছাড়া অন্য কোন টাকা আদায় করা হচ্ছে না। যারা বেতন দেয়নি তাদের কাছ থেকে শুধু মাত্র বেতন নেয়া হচ্ছে। 

তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা সব টাকা কলেজের ব্যাংক হিসেবে জমা হচ্ছে।
 
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034549236297607