সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি আজ বৃহস্পতিবার মুলতবি করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ এই বিষয়ে শুনানি ‘নট টুডে’র আদেশ দেন।
শুনানিতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলে, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত আপিল দায়ের করেন। আমরা শুনবো।
এই সংক্রান্ত রিটের পক্ষে নিযুক্ত সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী আজ নেই বলে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জহিরুল ইসলাম আজকের শুনানি ‘নট টুডে’র আবেদন করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু।
এর আগে, গত ৯ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। ওইদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এরপরই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় আন্দোলন। বুধবারও রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে অবস্থান ও কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এর আগে, গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের একদিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ পরিপত্র জারি করে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ‘সরকার সকল সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৭/০৩/১৯৯৭ তারিখের সম(বিধি-১)এস-৮/৯৫(অংশ-২)-৫৬(৫০০) নং স্মারকে উল্লিখিত কোটা পদ্ধতি নিম্নরূপভাবে সংশোধন করিল:
(ক) ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হইবে; এবং
(খ) ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হইল।’
এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয় পরিপত্রে।
পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সাতদিনের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ৫ জুন হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে রায় দেন।