সরকারি রউফ কলেজের তিন শিক্ষকের সনদ জালিয়াতির অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রংপুর |

রংপুরের পীরগঞ্জে সরকারি শাহ আবদুর রউফ কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। তাদের নিয়োগ নিয়েও অনিয়মের শেষ নেই, আছে ঘোরতর অভিযোগ। তবে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদ জালিয়াতিতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন আট শিক্ষক।

এবার অভিযুক্ত তিন শিক্ষক হলেন-উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মোছা. মুসতারী পারভীন, মো. সাগর মন্ডল ও শাহ মো. সোয়েব মিয়া। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগে প্রাপ্যতা না থাকলেও তৃতীয় একজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কলেজটি সরকারি হওয়ার আগে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে দুজন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিলো। কিন্তু নিয়োগ দেয়া হয় তিনজনকে। 

কলেজের প্রভাষক মোছাম্মৎ মুসতারী পারভীন এমএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণি অর্জন করলেও ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ বোর্ডের নম্বরপত্রে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ দেখান। তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জাল সার্টিফিকেট দেখান, যার মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ডকে প্রভাবিত করে প্রথম হন। একই বিভাগের অন্যান্যদের নম্বরপত্রের প্রতিটি পাতায় সুপারিশ করা থাকলেও তার নম্বরপত্রে নিয়োগের কোনো সুপারিশ নেই। 

একই অবস্থা শিক্ষক সাগর মন্ডলের ক্ষেত্রে। এই দুই শিক্ষককে নিয়োগ বোর্ড তাদের সুপারিশপত্রে নিয়োগ দেয়ার কোনো সুপারিশ করেননি। 

সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার পর সাগর মন্ডলের নামে পদ সৃজন করা হয়েছে। প্রথম দিকের রেজুলেশনের সঙ্গে সদ্য জমা দেয়া রেজুলেশনের কোনো মিল নেই বরং অনেক অসংগতি রয়েছে। 

এদিকে ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক শাহ মো. সোয়েব মিয়া ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পেয়েছেন। রেজুলেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুজন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয় স্নাতক (সম্মান) কোর্সে। কিন্তু সোয়েব মিয়ার রেজুলেশনে ঘষামাজা করে তীর চিহ্ন দিয়ে ডিগ্রি কোর্সে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়। এ কারণে প্রথম এবং দ্বিতীয় পদ সৃজন তালিকায় তার নাম আসেনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পদ সৃজন সংক্রান্ত সভার মন্তব্য তালিকায় শাহ মো. সোয়েব মিয়াকে জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রাপ্যতা নেই বলা হয়েছে। কিন্তু এসব কিছু উপেক্ষা করে সম্প্রতি পদ সৃজনের জন্য তার ফাইল আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলা সদরে শাহ আবদুর রউফ কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এমপিওভুক্ত হয়ে ডিগ্রি অধিভুক্ত হয়। পরে কলেজে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে ৯টি বিষয়ে পাঁচজন করে মোট ৪৫ জন প্রভাষক এবং নয়জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। ওই প্রভাষকরা কখনই এমপিওভুক্ত কিংবা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না-এমন শর্তেই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।

পরবর্তীতে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট ৭২ জনের পদসৃজন করা হয়। এর মধ্যে ৭০ জন যোগদান করেছেন। দুইজনের পদ স্থগিত রেখেছে মন্ত্রণালয়। এরপর ২৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃজন করা হয়। বর্তমানে ২৩ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম চলমান রয়েছে।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজে কর্মরত জাল সনদধারী আট শিক্ষক শনাক্ত হয়েছিলেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মামলা করে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করে। এদিকে, অভিযুক্ত শাহ মো. সোয়েব ও সাগর মন্ডলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কল দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজনুর ইমাম মো. সাইফুল নেওয়াজ শাকিল বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগের সময় আমি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলাম না। তাই এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের সনদ জাল কি না। 

তবে আগের আট শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হলে তারাও কোর্টে যান এবং সর্বশেষ আমার জানামতে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। তাদের চাকরি নেই। 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031599998474121