বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে সরকারিকরণ করাসহ ৮ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট করছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট।
পাশাপাশি জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয় ৮ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোতে আগামী প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়া হবে না।
প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে সব শিক্ষকরা মাঠে আন্দোলন করবেন। আসছে বাজেটে বা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ৮ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানানো হয়।
সোমবার (২২ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের মুখুপাত্র এস এম জয়নুল আবেদীন জেহাদী বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান শুরু হয়েছিল। তখন ছিল ১৮ হাজার প্রতিষ্ঠান। কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ধাপে ধাপে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী পাচ্ছি না। আমাদের এখানে উপবৃত্তি না থাকার কারণে পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছে। এটি হচ্ছে আমাদের মূল সমস্যা। পাশাপাশি আরেকটা সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের শিক্ষকরা বিনা বেতনে চাকরি করছেন। অনেকে জীবনের শেষ বয়সে চলে এসেছেন। ফলে তাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।
তিনি বলেন, গত বছর শিক্ষামন্ত্রী আমাদের ওয়াদা করেছেন এই দুইটি বিষয় (উপবৃত্তি এবং বেতন সরকারিকরণ) তিনি অতি দ্রুত সমাধান করবেন। তখন তিনি চারমাসের সময় নিয়েছিল। কিন্তু আজকে প্রায় আট মাস হয়ে যাচ্ছে এটির কোনো সমাধান এখনো হয়নি। ফলে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না পাওয়ার কারণে আজকে আমরা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
তিনি আরও বলেন, এ অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই আগামী প্রথম সাময়িক পরীক্ষা আমরা নেব না। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে আমরা সব শিক্ষকরা মাঠে আন্দোলন করবো। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়বো না।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আমরা ৩৯ বছর ধরে সরকারের সব বিধি নিষেধ মেনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় শিক্ষাকতা করে আসছি। কিন্তু এই ৩৯ বছরে আমরা শিক্ষকরা একটি টাকারও বেতন ভুক্ত হতে পারিনি। প্রাথমিক শিক্ষকদের যেভাবে বেতনের আয়তায় নিয়ে এসে ধাপে ধাপে সরকারিকরণ করা হয়েছে ঠিক একইভাবে আমাদের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় শিক্ষাকদের ক্রমান্বয়ে সরকারিকরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এ বিষয়টি সংসদে উপস্থাপন করার জন্য আমরা কিছু আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের বলেছি। তারা আমাদের বলেছেন আমাদের এ বিষয়টি তারা সংসদে উপস্থাপন করবেন। অতীতে আমাদের এ বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে সংসদে আলাপ আলোচনা হয়েছে। আমাদের এ দাবি প্রধানমন্ত্রী বরাবর করছি। তিনি তা সমাধান করবেন এ আশা করছি।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাশিক্ষক ঐক্যজোটের ৮ দফা দাবিগুলো হচ্ছে:
১। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রাইমারির মতো সরকারিকরণ করতে হবে।
২। প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়িমাদরাসা শিক্ষার্থীদের উপ-বৃত্তিসহ সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।
৩। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদরাসাগুলোকে অবিলম্বে কোড নাম্বারের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪। প্রাইমারি শিক্ষকদের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের পি.টি.আই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। প্রাইমারি শিক্ষকদের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ৪র্থ শ্রেণির পদ সৃষ্টি করতে হবে।
৬। প্রাইমারি শিক্ষকদের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে স্থায়ী রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭। প্রাইমারি শিক্ষকদের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে ভৌত অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
৮। শিক্ষার নীতিমালা-২০১৮ এর জনবল কাঠামো সংশোধন করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মো. মোখলেছুর রহমান। সঞ্চালনা করেন জোটের মহাসচিব তাজুল ইসলাম ফরাজী।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কাজী ফয়জুর রহমান, মুখপাত্র এস এম জয়নুল আবেদীন জেহাদী, মাও. আব্দুল কাদের মাল, মাও. আল-আমিন, শামসুল হুদা, আব্দুল হান্নান, মাস্টার শওকত আলী, হাফেজ মাহমুদুল হাসান, মাও. জহিরুল আলম, খোরশেদ আলম, মাও. আব্দুস ছালাম, মো. মুজিবুর রহমান, রবিউল ইসলাম, নূর আলম পন্ডিত, নুরুল আমিন, হাজী আনোয়ার, এনামুল হক, আবুল হোসেন, তবিবুর রহমান, আব্দুর রশীদ, একরামুল হক, রুহুল আমিন, আব্দুল কাদের, হাসনাইন ও মাও. জাকির হোসেন।