শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, করোনা মহামারিকালে সামনে এগিয়ে যেতে সার্বিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্লেষণের সুযোগ এসেছে। ইতিহাসে দেখা যায়, মহামারিগুলো সভ্যতাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে। এর ফলে মানুষ নিত্যনতুন চিন্তা-চেতনা হাজির করে। আমি মনে করি, কোভিডের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা আমাদের সামনে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে । ক্ষতি হয়েছে, তবে নতুন সুযোগের দ্বারও উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সংখ্যাগত যে চ্যালেঞ্জ ছিল তা দূর করা হয়েছে। অবকাঠামো বৃদ্ধি করা, শিক্ষকদের এমপিওর আওতায় নিয়ে এসে ধীরে ধীরে সরকারিকরণের দিকে হাঁটছি আমরা। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক লক্ষ্য রেখে দেশের জন্য কাজ করছি।
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে ‘কোভিড পরিস্থিতি : শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
উপমন্ত্রী আরও বলেন, কোভিড কিন্তু আমাদের থেকে চলে যাবেনা, এগুলো অন্যন্যা ভাইরাসের মতোই থেকে যাবে, এর সাথেই আমাদের বসবাস করতে হবে। এটা বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে আসবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় আমরা ভ্যাকসিন পেয়েছি, তা আমাদের শিক্ষকরা, ছাত্রদের দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনকে কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি।
তিনি আরও বলেন, স্কিল বেইজড এডুকেশন করা (দক্ষতা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা করা) এবং আউটকাম বেইজড এডুকেশনে হাঁটার সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে এখন। পৃথিবীতে আর কোনও দেশ নেই যেখানে ৩৫ কোটি বই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। এটা আমাদের একটা বড় অর্জন বটে। আমরা চাই টেক্সটবুকগুলো গাইডলাইনের ভূমিকা পালন করবে। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য, উপাত্ত, নির্দেশনা থাকবে।
উপমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে পরিবার পর্যায়ে পাঠ্য বই থেকে শুরু করে টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান চলছে, যেখানে সার্বক্ষণিক ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিতের ক্লাস সবার জন্য আনছি। সেইভাবে আমরা সিলেবাস করছি। আগামী বছর থেকেই আমরা সেটা শুরু করতে চাই। শিক্ষকদের নানাভাবেই ট্রেনিং দিতে হবে। এককেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা করলে হবে না, বিশ্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদেরও পরিবর্তিত হতে হবে। শিক্ষকদের পাঠদানের কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি বলেন, জ্ঞান অর্জন ও ইনফর্মেশন কালেকশন ভিন্ন বিষয়। ইন্টারনেটে ঘেঁটে যা পাই তা তথ্য-উপাত্ত। কিন্তু জ্ঞানের বিষয়টা ভিন্ন। তথ্যটা কি আহরণ করে সেটাকে বিশ্লেষণ করে সেটাকে গেলে রূপান্তরিত করতে হবে এবং সেটাই হচ্ছে জ্ঞানচর্চা। শিক্ষকদের এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সেখানে আমাদের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে তাদের মান বৃদ্ধি করা। পরীক্ষা নীতির পরিবর্তন করে মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন আনা হয়েছে। মূল্যায়ন পদ্ধতিকে স্থায়ী করে কিভাবে আরও সুন্দর করা যায় সেটার পর্যালোচনা করছি।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন শিক্ষাব্যবস্থা কখনো একমুখী থাকেনা। প্রতিনিয়ত সেটা পরিবর্তন হয়। সে পরিবর্তনের সাথে আমাদের শিক্ষকদেরও পরিবর্তন হতে হবে। তাদেরকে এই অনুশীলনের মধ্য আসতে হবে। আমাদের যেই শিক্ষাব্যবস্থা সেটা কিন্তু যুগোপযোগী নয়। আজকের গেঞ্জিটা আগামীতে কাজে লাগবে বলে সম্ভাবনা নেই। তাই আমরাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্কিল বেইজড এবং বিশ্লেষণধর্মী শিক্ষার দিকে এগিয়ে চলেছি। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্লেষণ করা শিখবে, এমনভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপসচিব মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী। সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক।
এতে বক্তব্য রাখেন, কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিমুল মহাজন, কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম, গার্হস্থ অর্থনীতি সিটি কর্পোরেশন অধ্যক্ষ আলম আকতার, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ তুষারকান্তি নাথ, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবুল হক চৌধুরী, প্রফেসর হোসাইন আহমেদ আরিফ এলাহী। ধর্মগ্রন্থপাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা বোর্ডের সচিব আব্দুল আলীম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিল্পব গাঙ্গুলী, কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ।