মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবিতে লাগাতার অবস্থানের পর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানোর ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। আগামী রোববার থেকে সরকারিকরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা৷ সরকারিকরণের দাবিতে গত তিন দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালানোর পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না মেলায় নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খা হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন বিটিএ নেতারা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে বিটিএর ব্যানারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা বা আশ্বাস না আসায় গত বুধবার রাতে সভা করে আন্দোলন কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বিটিএ। শুক্রবার সকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলো প্রাচীন শিক্ষক সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিটিএর সভাপতি সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, আগামী ১৬ জুলাই (রোববার) থেকে (সরকারিকরণের) দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
বিটিএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে আমরা আশা করেছিলাম সরকার আলোচনার মাধ্যমে আমাদের দাবি মেনে নিয়ে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আজ শুক্রবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, আগামী রোববার খুলবে। আগামী রোববার থেকে যতোদিন পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের ঘোষণা না আসবে ততোদিন পর্যন্ত আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা খুলবো না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবো না। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবি আদায় করেই শ্রেণিকক্ষ বা বাসায় ফিরবো।
বিটিএ নেতারা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানদের থেকে এক ধাপ নিচে বেতন দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর যাবত অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের বিকল্প নেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ করতে সরকারের খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।