সরেজমিন শিক্ষা ভবন : আলোর পাশে অন্ধকার

রুম্মান তূর্য |

ভর দুপুরে ঠায় দাঁড়িয়ে তাজিব। বয়স বড়জোর এগারো। পরনে সস্তায় কেনা নীল জিন্সের সঙ্গে নকশাদার লাল শার্ট। সামনে টুলের ওপরে রাখা গামলায় কিছু বাদাম, বুট। বিকিকিনি কম বলে মায়াকাড়া চেহারাটা মলিন। তাতে রঙিন পোশাকের প্রতিফলন নেই। যেনো তিনি নিজেই বিবর্ণ জীবনের মূর্তিমান প্রতিচ্ছবি।

তাজিবের জন্ম হাওরপাড়ের জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছিরনগরে। মফস্বলের খোলা হাওয়ায় বেড়ে ওঠা। একসময় অন্য শিশুদের সঙ্গে যাতায়াত শুরু মাদরাসায়। ছাত্র হিসেবে খুব একটা খারাপ ছিলেন না। কিন্তু, অভাব লেগেই থাকতো সংসারে। তাই, একটু স্বচ্ছলতার আশায় বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে রাজধানীতে আসা। ঠাঁই হয়েছে পুরনো ঢাকার এক খুপরিতে। সেখান থেকে রোজ বের হন বাদামের ডালা নিয়ে। কোনো দিন হয়তো একটু বেশি আয় হয়। তবে বিক্রি-বাট্টা একদমই জমেনি আজ। 

তার পেছনে ব্যস্ত আবদুল গণি রোড। অগণিত গাড়ির চাকার আওয়াজ, অকারণ হর্ন। সামনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রশাসনের হৃদপিণ্ড খ্যাত শিক্ষা ভবন। কিছুক্ষণ পর পর দুএকজন কর্মকর্তা এসে ধুম্রশলাকায় আয়েসি টান দিচ্ছেন। তারপর চলে যাচ্ছেন যার যার কাজে। শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া তাজিবের ওপর কোনো শিক্ষা কর্মকর্তারও দৃষ্টি নেই। তার জীবনে এখন শিক্ষার আলো নিভে যাওয়া অন্ধকার। আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন বাঁধা পড়েছে বাদামের ডালায়।   

বাদাম কেনার উসিলায় কথা হলো তাজিবের সঙ্গে। উদাসি কণ্ঠে দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, আব্বায় তেমন কিছু করতে চায় না। মায় কাম করে। আমি আর বড়ভাইও কাম করি। আব্বায় একদিন, দুইদিন বাদাম ব্যাচে। বাকি দিন বাইত্তেই (বাড়িতেই) শুইয়া-বইয়া থাকে। প্যাট চালাইতে বড় ভাই কাম করে, আমি বাদাম বেঁচি।

 

হাইকোর্ট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ মিনার, সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, কদম ফোয়ার এসব স্থানেই রোজ বাদামের ডালা পেতে বসে তাজিব। প্রায় রোজই আসা হয় এখানটায়। এটি যে শিক্ষা ভবন সেটা জানেন তাজিব। কিন্তু ওই ক্যাম্পাসে যে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অধিদপ্তরসহ বেশকিছু অফিস আছে সেটা জানা নেই তার। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর সম্পর্কে তার কোনো ধারণা থাকার কথা নয়, নেইও। শুধু জানেন,  বাদাম বিক্রি করে কিছু টাকা আয় হলে তুলে দেবেন মায়ের হাতে। 

এখনো স্কুলে যেতে ইচ্ছে হয় কি-না জানতে চাইলে হঠাৎ মাথা নিচু করে ফেলেন সজিব। কিছু সময় চুপ থাকেন। তারপর অস্ফুটে বলেন, মন চাইলে সব হয় না। 

তাজিবের মনের চাওয়া কেউ পূরণ করতে চাইলে তাকে পাওয়া যাবে ০১৭৬৪০৮০১৩২ নম্বরে।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030200481414795