সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়।
দৈনিক আমাদের বার্তা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিলো। প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক কার্যক্রমও হয়নি। এ কর্মবিরতির সমর্থনে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকের ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা।
এ সময় ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের সুরক্ষার জন্য, বয়স্কদের সুরক্ষার জন্য নানা ধরনের ভাতা দিয়ে থাকেন। আমাদের শিক্ষকদের তো কোনো সুরক্ষা নেই। আপনারা সুযোগ পেলেই আমাদের ভাতা কেটে দেবেন, আমাদের এককালীন পেনশন দেবেন না। আমাদের চোখ পানিতে ভাসাবেন না। হাজার হাজার শিক্ষার্থী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।
তিনি আরো বলেন, কর্মজীবন শেষে এককালীন ভাতা পেয়ে শিক্ষকেরা হয়তো নিজের জন্য কিছু করেন। নিজের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার পেছনে খরচ করেন। আমাদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এই স্কিমের মাধ্যমে একটি কুচক্রীমহল প্রধানমন্ত্রীকে শিক্ষকদের থেকে বিচ্ছিন্ন করছে।
এদিকে, সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমকে লাইফ ইনস্যুরেন্স আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোতালেব।
তিনি বলেন, রাতের আঁধারে একটি কুচক্রী মহল এবং সচিবরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়েই সচিবালয়ে অফিস করতে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে অফিসে যাওয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই। প্রয়োজনে আমরা তাদের যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেবো।
আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সকল কার্যক্রম। ফলে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। দূরদূরান্ত থেকে এসেও অনেকে সেবা পাননি। ‘কর্মবিরতি’ পোস্টার লাগিয়ে কিছু কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কিছু কক্ষে লোকজন থাকলেও তারা কোনো সেবা দিচ্ছেন না।
এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিনিধিরা একই ধরনের কর্মসূচির সংবাদ পাঠিয়েছেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ আল মামুনের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে শিক্ষক নেতারা বক্তব্য দেন।
এদিকে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার পরিষদের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, সার্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলসহ নানা দাবিতে শিক্ষকেরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। এ অচলাবস্থার কারণে সেশনজটের শঙ্কা করছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। তবে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে তা পূরণ করার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।
শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের পাশাপাশি হল প্রাধ্যক্ষের অফিস, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ থাকবে।
এর আগে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া। তাদের দাবিগুলো হলো-‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাই ও তার পরে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত করবে সরকার।